ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প তৈরি

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২; সময়: ৩:০৪ অপরাহ্ণ |
ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প তৈরি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক :  প্রকল্পটি গ্রহণের সময় চিন্তা করা হয়নি অনেক কিছুই। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হলেও শুধু ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প।

ফলে এখন শেষ সময়ে এসে ফাউন্ডেশনের ডিজাইনসহ নানা পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে যোগ হচ্ছে বিভিন্ন নতুন কার্যক্রমও। এসব কারণে বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং আরও ২ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সবমিলিয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা।

এর মধ্যে বরাদ্দ আছে বিদেশ প্রশিক্ষণের জন্য ২ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং কার্যক্রম আছে যেগুলো পরিবর্তন বা যোগ না করলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সার্থকতা থাকবে না। শুরুতেই কেন এসব চিন্তা করা হয়নি এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি করেছিলাম। তারা ভুল স্বীকার করেছেন।

প্রকল্প তৈরির সময় এসব তাদের নজরে ছিল না। কিন্তু এসব কার্যক্রম এত গুরুত্বপূর্ণ যে বাধ্য হয়েই প্রকল্পটি সংশোধনীর সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। তবে একটি টিম গঠন করে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছিল। তারা মোট ব্যয় প্রস্তাব থেকে ১৪৩ কোটি টাকা কমিয়েছে। সেই সঙ্গে বাস্তব প্রয়োজনে প্রকল্পটি সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৪৮ কোটি ১১ লাখ ১৭ হাজার টাকা বাড়িয়ে এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ ১১ হাজার টাকা।

এছাড়া ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হয়। এতেও শেষ হয়নি। ফের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর সময় বাড়ানো হয়।

গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২ হাজার ৩১২ কোটি ২২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭১ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশ। এবার দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. মাহফুজুর রহমান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পটি যখন তৈরি হয় তখন কোনো ড্রয়িং ও ডিজাইন করা হয়নি। শুধু ট্রাফিক স্টাডিসহ আনুষঙ্গিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছিল। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপরই বাকি কাজ করতে হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তির কারণে পুরো অ্যালাইনমেন্ট (যে স্থান দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে যাবে) পরিবর্তন করতে হয়েছে।

নতুন করে ড্রয়িং ও ডিজাইন করতে হয়। এরপর প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে ইউটিলিটি স্থানান্তরের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এখানে অনেক ব্যয় বেড়ে গেছে। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণ প্রথম দিকে ১২০ কাঠা করার কথা থাকলেও এখন ৬০০ কাঠার মতো নিতে হচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশনের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর প্রকল্পটি সংশোধন করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে প্রকল্প তৈরির সময় টাকা বরাদ্দ না থাকায় এগুলো করার সুযোগ ছিল না। প্রকল্প পাশ হওয়ার পরই করা হতো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করা হয়নি। সরকারি নির্দেশনা মেনে এই অর্থ খরচ করা হবে না।

প্রকল্পের শেষ সময়ে যেসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে সেগুলো হলো-প্রকল্পের সল্টগোলা থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করতে হয়েছে। এতে ফাউন্ডেশন, সাবস্ট্রাকচার এবং সুপার স্ট্রাকচারের পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া স্পানের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে বলা হয়েছে অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে কেইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এলাকা, সিইপিজেড, বন্দর এলাকা, কাস্টমস সার্কেল এবং আগ্রাবাদ এলাকার ২০টি জংশন পড়েছিল। যান চলাচলে সুবিধার্তে এবং বিভিন্ন সংস্থার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্প্যানের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রে মূল ডিজাইনের ৩০-৩৫ মিটার থেকে বাড়িয়ে এখন করা হচ্ছে ৪৫-৫০ মিটার। আরও যেসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইল ক্যাপের সাইজ-পিয়ার এবং কংক্রিট গ্রেডের পরিবর্তন।

রেললাইনের ওপর পোর্টাল ফ্রেমের মাধ্যমে পিয়ার নির্মাণ। ফাউন্ডেশনের ডিজাইন পরিবর্তন, পিসি গার্ডারের পরিবর্তে আরসিসি বক্স গার্ডার যুক্ত করা। ডেক স্লাবের থিস্কনেস (পুরুত্ব) বৃদ্ধি করা, র‌্যাম্পগুলোর পিসি গার্ডারের পরিবর্তে আরসিসি বক্স গার্ডার অন্তর্ভুক্তকরণ করা হয়েছে।

যেসব খাত নতুন করে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলো হলো-এলইডি লাইট স্থাপন, সিসি টিভি ক্যামেরা (কেবল ও নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাসহ) এবং প্লাম্বিং সিস্টেম (ফ্লাইওভার ও র‌্যাম্পসহ) যুক্ত করা হচ্ছে। আরও আছে রাস্তার উভয়পাশে ড্রেন নির্মাণ, ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য বর্ধন, মধ্যবর্তী প্রতিবন্ধক নির্মাণ এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মনিটরিং ভবন ও ১৩টি কন্ট্রোল ইলেকট্রিক্যাল রুম নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে অর্থায়নের ধরনও পরিবর্তন হয়েছে।

এক্ষেত্রে সরকারি তহবিলের অর্থের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৫২৪ কোটি টাকা ২ শতাংশ সুদে দেওয়া হয়েছে। এতে ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এজন্য টোল প্লাজা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে