ভারতের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শেষ শুভেচ্ছা

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২; সময়: ৯:৫০ পূর্বাহ্ণ |
ভারতের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শেষ শুভেচ্ছা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ১৪ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। দিনটিকে সামনে রেখে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি বাণী দেন। সেবার ছিল ভারতের ২৮তম স্বাধীনতা দিবস। সে উপলক্ষে ভারতের রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় ভারত সরকার ও জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।

ঢাকা ও দিল্লির বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন যে, ‘দই দেশের কল্যাণে উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার জন্য এই দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও জোরদার ও সুসংহত হবে।

বঙ্গবন্ধু ভারতের রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও ভারতীয় জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করন। ১৫ আগস্টের পত্রিকায় যখন এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, তখন বঙ্গবন্ধু আর জীবিত নেই। ততক্ষণে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে তাঁর বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছেও একটি বার্তা পাঠান। স্বাধীনতা দিবসের বার্তায় শ্রীমতি গান্ধী ও ভারতীয় জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এ দিবস উপলক্ষে আমরা ভারতের সেই বন্ধুর প্রতি জনগণের সঙ্গে আনন্দ প্রকাশ করছি, যাদের মতো আমরাও স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শের অধিকারী।’ বার্তায় বঙ্গবন্ধু আস্থা প্রকাশ করেন যে, আদর্শ ও আশা আকাঙ্ক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত মৈত্রী বন্ধন জনগণের পারস্পরিক কল্যাণে ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে।

যে বঙ্গবন্ধু জীবনের শেষ দিনেও বন্ধুরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে বাণী দেন, সেই বন্ধুরা তার হত্যার প্রতিবাদে কিছুটা হলেও রুখে দাঁড়িয়েছিল। পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডির একদিন পর ১৬ আগস্ট কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ হয়। ভারতীয় পত্রপত্রিকা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর প্রকাশ করে। ভারত সরকার বঙ্গবন্ধুর কন্যাদের জার্মানি থেকে তাদের দেশে নিয়ে আসে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এর কয়েকদিনের মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশটিতে সফররত মার্কিন সিনেটর টমাস এফ ইগলটনের কাছে ব্লিৎজ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় সিআইএ’র সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধটি ‘চাঞ্চল্যকর’ বলে মন্তব্য করেন।

বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা ও তাদের পরিবারের যারা বেঁচে ছিলেন, তাদের নিরাপত্তা দিতে যে তৎপরতা ভারত দেখিয়েছিল তা প্রশংসাযোগ্য। শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা সি ভি রঙ্গনাথন জার্মানিতে ভারতের রাষ্ট্রদূতের বাসভবন যান, সেখানে গিয়ে বিস্তারিত পরিস্থিতি জানানো হয়। তখন তাদেরই পরিকল্পনায় ভারতে যাওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। সেদিনই শ্যালিকা রেহানা, স্ত্রী হাসিনা, শিশু ছেলে জয় ও শিশু মেয়ে পুতুল এবং নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং প্রাণ রক্ষার জন্য ভারত সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চান ওয়াজেদ মিয়া।

সেসময় শ্রীলঙ্কা থেকেও মেনে নেওয়া হয়নি মোশতাক সরকারকে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কোনোভাবেই রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা কিংবা রাজনৈতিক খুনের পক্ষ নেবেন না। তিনি দ্রুততম সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডে শোক প্রকাশও করেছিলেন। একইভাবে ভুটানও ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিবাদ জানায়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে