মা মানসিক ভারসাম্যহীন, বাবা নিখোঁজ, যমজ শিশুর ভরসা এখন দাদি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২২; সময়: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ |
মা মানসিক ভারসাম্যহীন, বাবা নিখোঁজ, যমজ শিশুর ভরসা এখন দাদি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : জেসমিন-ইয়াসমিনের বয়স যখন আড়াই মাস তখন বাবা-মা নিখোঁজ হয়। এখন তাদের বয়স ২ বছরের মতো। মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বাড়িছাড়া। আর বাবাও রহস্যজনক কারণে নিখোঁজ রয়েছে। তারা বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন জানে না কেউ। দাদিই এখন তাদের একমাত্র ভরসাস্থল।

এ অবস্থায় বেকায়দায় পড়েছেন ৬৭ বছর বয়সী দাদি ফিরোজা বেগম। শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের চরজঙ্গলদী গ্রামের বিধবা ফিরোজার সম্বল বলতে আছে মাত্র তিন শতাংশ জমি। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ভিক্ষা করে শিশু দুটিকে লালন-পালন করছেন। কিন্তু এখন আর তিনি পেরে উঠছেন না। তাই অবুঝ
শিশু দুটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার সাহায্য চেয়েছেন।

জানা গেছে, চার বছর আগে ফিরোজা বেগমের স্বামী মইনা মিস্ত্রি মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ফিরোজা তার রেখে যাওয়া তিন শতাংশ জমিতে একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন। সেটিও এখন বসবাসের অযোগ্য।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, যমজ বোন জেসমিন ও ইয়াসমিন শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের চরজঙ্গলদী গ্রামের ছামেদুল হকের মেয়ে। তাদের মা রোকিয়া বেগম। ছামেদুল স্ত্রীসহ রাজধানী ঢাকায় থেকে দিনমজুরের কাজ করতেন। সেখানেই শিশু দুটির জন্ম হয়েছিল। কিন্তু শিশু দুটির জন্মের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় তাদের মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর বাবা দুই শিশুকন্যাকে মা ফিরোজা বেগমের কাছে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এখন তারা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন তা জানে না কেউ।

ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আড়াই মাস বয়সে ছেলে তার মেয়ে জেসমিন-ইয়াসমিনকে আমার কাছে রাইখ্যা চইলা যায়। এরপর থাইকা আমি ওগরে বড় করতাছি। বাচ্চা দুইডা মায়ের বুকের দুধ পায় নাই। তাই ওগরে জীবন বাঁচাবার লাইগা চাইলের গুড়ার সঙ্গে অল্প পরিমাণ লবণ মিশাইয়া পানি দিয়া বিকল্প দুধ বানাইতাম।

আর ওই বিকল্প দুধ ফিডারে ভইরা বাচ্চা দুইডারে খাওয়াইছি। তবে মাঝে-মধ্যে এলাকার দুই-একজন গুঁড়া দুধ কিনা দিছে। সেই দুধও খাওয়াইছি। আমি তো গরিব মানুষ। বাচ্চা দুইডারে কোনো সময় ভালো খাবার খাওয়াইতে পারি নাই। আমারতো রক্তের সন্তান। তাই ওগরে কোনো সময় ছাড়বার পারি না। ওরা নানা রোগে ভুগতাছে।

ফিরোজার প্রতিবেশী সফিকুল ইসলাম বলেন, বিধবা ফিরোজা বেগম অতিদরিদ্র। তার নিজের কোনো আয় নেই। মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে দুটি অসহায় শিশুকে বড় করতাছে। সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘর ও
প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা দেওয়া হলে শিশু দুটির ভবিষ্যত নিরাপদ হতো।

প্রতিবেশী আব্দুল করিম বলেন, সরকার কত মানুষরে সাহায্য করতাছে। এই দুইডা শিশুরে সাহায্য করলে অনকে সওয়াব হবে। আমরা চাই সরকার এ শিশু দুইডারে সাহায্য করুক। নইলে তাদের ভবিষ্যত জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বলাইয়েরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জামিউল হক বলেন, গরিব বিধবা ফিরোজা ও তার যমজ নাতনির বিষয়টি জানি। চলতি অর্থবছরে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির কোনো বরাদ্দ পরিষদে এখনো আসেনি। বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অসহায় পরিবারটিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহনাজ ফেরদৌস জানান, আমরা শিশু দুটির কথা শুনেছি। শিশু দুটিকে কীভাবে সাহায্য করা যায় তা দেখছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে