তানোরে এমওপি সংকট কৃষকের সার নিয়ে ডিলারদের লুকোচুরির অভিযোগ

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২; সময়: ৬:০১ অপরাহ্ণ |
তানোরে এমওপি সংকট কৃষকের সার নিয়ে ডিলারদের লুকোচুরির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরেন্দ্র অঞ্চল : চলছে আমনের মৌসুম। এমনিতেই এবার অনাবৃষ্টির কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে এখনো কৃষকেরা আমন রোপন শেষ করতে পারেনি,পতিত পড়ে আছে হাজার হাজার বিঘা জমি। সেচ দিয়ে এখন পর্যন্ত যেটুকু আমন চাষ হয়েছে সেটুকু আমন জমিতে এমওপি(পটাশ) সার সংকটে পড়েছে কৃষক।

কৃষকেরা জানান,সার ডিলার গুলো ওএমপি সার নিয়ে কৃষকের সাথে লুকোচুরি খেলছে। নিজ ঘরে সার থাকলেও এক ডিলারে কাছে গেলে এমওপি সার না দিয়ে অন্য ডিলারে কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। কোন কোন ডিলার পটাশ সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকার বস্তার এমওপি(পটাশ) সার এক হাজার ২৫০ টাকা নিয়ে বিক্রি করছে বলে একাধিক কৃষকের অভিযোগ। বেশি দামে সার বিক্রি বিষয়ে কৃষকেরা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের মৌখিকও মোবাইলে অভিযোগ দিয়ে ও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।

তানোর কৃষি অফিসের তথ্য মতে,উপজেলায় ৯ টি বিসিআইসি ও ২৩টি বিএডিসি সার ডিলার রয়েছে। চলতি জুলাই মাসে মোট ৩২টি ডিলাদের মধ্যে ৮০ বস্তা করে এমওপি(পটাশ) বরাদ্দ দেন বিএডিসি।

কৃষকেরা জানান,বিসিআইসি ডিলার এর কাছে গেলে এক বস্তার ডিএপি কেনলে ১০ কেজি পটাশ দিচ্ছে। বিঘা প্রতি পটাশ সার ৩ কেজি করে পড়ছে। যা দিয়ে আবাদ করা মোটেও সম্ভব নয়। কাজেই বাধ্য হয়ে বাজারে ছোট বিএডিসি ডিলাদের কাছে গিয়ে বস্তা প্রতি ৫০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে। কৃষকদের প্রশ্ন সব সার সরকার ভুর্তিকি দিয়ে ডিলাদের দিচ্ছেন তাহলে কেন অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিতে হচ্ছে। সরকারে কৃষি বিভাগ কিছুই দেখছেনা।

এদিকে বিসিআইসি ডিলারদের দাবি,তারা উপজেলায় ৯ জন ডিলার জুলাই মাসের ৮০ বস্তা করে বরাদ্দ পাওয়া এমওপি পটাশ সার কৃষকদের মধ্যে সরকারী দরে সমান করে বন্টন করে দিচ্ছেন। অথচ একই বরাদ্দ পেয়েছেন বিএডিসির ২৩ জন ডিলার। তারা সরকারে পাওয়া বরাদ্দ পেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাদের খাতায় যে সব কৃষকের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো সবই ভুয়া। তদন্ত করে দেখার দাবি তাদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিআইসি এক ডিলার জানান,মুন্ডুমালা বাজারে রকমারী টেডার্স ও জামান টেডার্স এর মালিক একই ব্যাক্তি। সে দুই নামে চলতি মাসে ১৬০ বস্তা এমওপি সার উত্তোলন করেছেন। অথচ এক জনের কাছে সরকারী দরে বিক্রি করেনি। সে এক প্রকার সংকট দেখিয়ে ৭৫০ টাকার সার এক হাজার ২৫০ টাকা করে বিক্রি করছে। তার দোকানের মেমু ব্যবহার না করে সাদা কাগজে দর লিখে দিচ্ছে কৃষকদের।

উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান,এবার তিন বিঘা আমন চাষাবাদ করেছেন। মতিউর রহমান জানান,এক সপ্তহ আগে তিনি মুন্ডুমালা বাজারে বিসিআইসি ডিলার মেসার্স নাইচ টেডার্স সার কেনতে গিয়ে ছিলেন। এক বস্তা ডিএপি সাথে ১০ কেজি পটাশ দিয়ে অন্য ডিলারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাই বাধ্য হয়ে তিনি মুন্ডুমালা বাজারের বিএডিসি ডিলার জামান টেডার্সে যান। সেখানে ডিলার বলেন সরকারে বরাদ্দ সার শেষ। অন্য জায়গা হতে কিছু পটাশ ব্যবস্থা করা আছে দাম পড়বে এক হাজার ২৫০ টাকা । অবশেষে সে দাম দিয়েই এক বস্তা পটাশ কেনে জমিতে দিয়েছেন।

মুন্ডুমালা পৌর এলাকার শুধু মতিউর রহমান একাই নয়,চলতি আমন মৌসুমে শুরু থেকেই উপজেলার কৃষকেরা এমওপি সার সংকটে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে পটাশ সার কেনে জমিতে দিচ্ছেন। এক শ্রেনীর অসাধু ডিলার বেশি মোনাফার জন্য কৃষকদের জিম্মি করে সার বিক্রি করছেন। তবে কোন প্রকার দোকানের মেমু না দিয়ে সাদা কাগজে লিখে দিচ্ছেন।

উপজেলার বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাবু জানান,চাহিদার চেয়ে জুলাই মাসে এমওপি সারের বরাদ্দ কম ছিল। ৩২ ডিলারকে ৮০ বস্তা করে দেয়া কথা থাকলেও কয়েকজন ডিলার গুডাউনে সার না থাকায় তুলতে পারেনি। এ বরাদ্দ বিএডিসির। তবে বিসিআইসি বরাদ্দ দিলে সংকট কেটে যাবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন,বিএডিসি যে ডিলার গুলো পটাশের বরাদ্দ পেয়েছেন। তারা ইচ্ছা মত দামে বিক্রি করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাদের উপরে সরকারের কোন তদারকি ন্ইা।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাইফুল্লার সাথে শনিবার মোবাইলে একাধিক বার কল দিলেও রিসিব করেনি।

তবে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মুন্ডুমালা পৌরসভা দায়িত্ব প্রাপ্ত) রাকিবুল হাসান বলেন,এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী পটাশ সংকট দেখিয়ে বেশি দাম নিচ্ছে বলে কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে। আমরা এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান অভিযান চালানোর ব্যবস্থা নিয়েছি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে