গ্রীষ্মকালিন কপি চাষে প্রস্তুতি, আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে কৃষক

প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২২; সময়: ১:২৩ অপরাহ্ণ |
গ্রীষ্মকালিন কপি চাষে প্রস্তুতি, আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে কৃষক

আব্দুল বাতেন : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালিন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষের আগাম প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে গ্রীষ্মকালিন এই সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকরা বীজ বপনের কাজ শুরু করেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা প্রায় ৮ হতে ১০ বছর ধরে এই গ্রীষ্মকালিন সবজি চাষ করায়  আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে তারা। ফলে প্রতিবছর গ্রীষ্মকালিন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষের পরিমান বাড়ছে।

রবি মৌসুমী এসব সবজি চাষ হলেও কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গ্রীষ্মকালিন এই সবজি চাষে সফলতার মুখ দেখছে এমনটায় বলছে কৃষকরা। অপরদিক কৃষি অফিস বলছে, প্রথমে কৃষি অধিদপ্তর থেকে গ্রীষ্মকালিন সবজি চাষের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। শুরুরদিকে কিছু বীজ ও পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের চাষ উৎসাহ প্রদান করা হয়। আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা আসায় এখন কৃষকরা নিজেরাই উৎসাহী হয়ে এই সবজি চাষ করছেন।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নে গোলাই, ধামিলা, শেখেরমারি,ফুলবাড়ী এলাকায় বেশী পরিমান গ্রীষ্মকালিন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষাবাদ হয়। এই এলাকায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে কপি চাষ করা হয়। এছাড়াও মাটিকাটা  ইউনিয়নের কপি চাষ হয়।

এই কপি মূলত শীতাকালে চাষের উপযোগী। তবে অগ্রীম জাতের গ্রীষ্মকালিন কপি প্রচন্ড গরম, রোদ, বৃষ্টিতে চাষ করতে অসুবিধা হয়। বীজ বপন করে চারা তৈরী করতে কঠোর পরিশ্রম ও বিকল্প কিছু কাজ করতে হয়।

গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা গ্রীষ্মকালিন বাঁধাকপি ও ফুলকপি চাষ করার জন্য বেড তৈরী করে বীজ বপন করছে। বীজ বপনের জন্য জমি চাষ করে সেড তৈরী করা হয়েছে। প্রচন্ড রোদ ও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সেডের উপরে বাঁশের ছাউনি তৈরী করা হয়েছে। এই ছাউনির উপর পলেথিন ও জাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় । প্রয়োজন অনুযায়ী পলিথিন সেড থেকে উঠানো ও লাগানো হয় বলে জানান কৃষকরা। এই ধরনের সেড কে গ্রীষ্মকালিন কপি চাষের জন্য পলিসেড বলছে কৃষি অফিস।

উপজেলার কামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করবেন। এজন্য সেডে বীজ বপন করা হয়েছে। জমিতে কপির চারা লাগানো থেকে ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে কপি উঠতে শুরু করে। বিঘাপ্রতি খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ হাজার। এক বিঘা জমিতে ৬ হাজার পিস মতো কপি লাগানো যায়। একবিঘা কপি ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এতে করে বিঘা প্রতি তিনি প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে জানান।

ধামিলা গ্রামের কৃষক জনিরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ৮ হতে ৯ বছর থেকে কপি চাষ করে আসছি। জমিচাষ, বীজ বপন থেকে শুরু করে সবজি উঠতে বিঘাতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তিনি এবার ৫ বিঘা জমিতে কপি চাষ করবেন। সবজি উঠার সময় ঢাকা ব্যবসায়ীদের কাছে জমি থেকেই কপি বিক্রি করে দেওয়া হয় প্রতিপিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে। এতে করে বিঘা প্রতি লাভ থাকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। গতবার দুই বিঘা আবাদ করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা করেছেন। এবার তিনি ৫ বিঘাতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক ভালে লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

গোলায় গ্রামের কৃষক মিলন বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমরা প্রথমে এই গ্রীষ্মকলিন কপি চাষ শুরু করি। অগ্রীম এই কপি উঠায় দাম ভালো পাওয়া যায়। কৃষি অফিস আমাদের প্রথমে বীজ ও পরামর্শ দিয়ে চাষ শুরু করি। চাষে সফলতা আসায় আমি প্রতিবার এই সবিজ চাষ করে আসছি। এবার ১৫ বিঘায় চাষ করছি। কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সময় উপযোগী পরামর্শ দিয়ে এই সবিজ চাষে সহযোগিতা করছেন বলে জানান।

ঈশ্বারীপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, এই কপি চাষের জন্য জুলাইয়ের মাঝামাঝি বীজ বপন করতে হয়। ৬০ থেকে ৬৫ দিন উঠতে সময় লাগে। সেপ্টেম্বর শেষ এবং অক্টোবরের শুরুতে এই সবজি উঠতে শুরু করে। এই সবজি আগাম উঠায় কৃষকরা ভালো দাম পাই। প্রতিপিস কপি জমি থেকেই একলাখ থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়। দাম ভালো থাকলে আরো বেশী দাম পায় বলে জানান।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা বলেন, এই উপজেলায় গ্রীষ্মকালিন ফুলকপি ৮ হেক্টর ও বাঁধাকপি ১২ হেক্টর মতো আবাদ হয়। এই মৌসুমে কপি চাষের কৃষকরা বীজের চারা তৈরীর কাজ শুরু করেছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের সঠিক পরামর্শ ও সারবীজ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার তাদের সঠিক তদারকি করে ফলে প্রতিবার কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। গ্রীষ্মকালিন সবজি চাষীদের জন্য কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে নির্দেশ প্রদান করা আছে বলে জানান।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে