রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি চক্রে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩০ জন

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২২; সময়: ৪:২২ অপরাহ্ণ |
রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি চক্রে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩০ জন

খুর্শিদ রাজীব, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তিপরীক্ষার প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হয়েছেন চারজন। আটককৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আটক হওয়া ওই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

উঠে এসেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩০ সদস্যের একটি চক্রের তথ্য। চক্রটি নওগাঁর একটি হোটেল থেকে ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি পরিচালনা করত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তারা জানান, প্রক্সি চক্রের চারজন আটক হলেও একাধিক ভুয়া প্রার্থী পার পেয়ে গেছেন। যারা প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছেন, তারা অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। কোচিং সেন্টার থেকে ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে পরিচয় ও প্রক্সির জন্য দেন দরবার হয়। চক্রটির মূল হোতা হিসেবে কাজ করেছে রাবির তিন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে একজন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়।

তার সঙ্গে রয়েছে লোক-প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরেক শিক্ষার্থী। তাদেরকে আটক করার জন্য কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

মঙ্গলবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্রক্সি দিতে এসে আটক রাবির ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী বায়োজিদ খান জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার বন্ধু ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময়ের নাম জানায়। প্রক্সি দেয়ার পূর্বে তিনি তার ফোন তন্ময়ের কাছে জমা রেখেছিলেন। এর আগে ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের বিরুদ্ধে রাবি ও রুয়েট ক্যাম্পাসে ইয়াবা ও মাদক পাচারের সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে আসে।
এদিকে, প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হওয়া আরেকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জান্নাতুল মেহজাবিনের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এর আগেও বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রক্সি দিয়েছেন তিনি। গত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে তিনজনকে পাস করান তিনি।

এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষায় তার সঙ্গে প্রক্সি দিতে যান রনি নামে আরেক ভুয়া প্রার্থী। পরীক্ষা শেষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গোপনে রনিকে একটি খুদেবার্তায় ধরা পড়ার বিষয়টি জানিয়েছিলেন জান্নাতুল মেহজাবিন। রনির সঙ্গে মেহজাবিনের ম্যাসেঞ্জারে বিভিন্ন সময়ের কথোপকথনের চ্যাট থেকে এর আগেও বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

এছাড়াও রোগী সেজে প্রক্সি দিতে এসে আটককৃত হন খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. সামের রায়। পাশাপাশি আটককৃত হন সামের রায়ের ভর্তিচ্ছু ক্যান্ডিডেট রাহাত আমীন।

একই দিন প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সঙীত বিভাগের শিক্ষার্থী ও মহসিন হলের ছাত্রলীগ নেতা মো. এখলাসুর রহমান। আটককৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়াও প্রক্সি চক্রটিকে ধরার জন্য তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্রের সাথে যে বা যারা জরিত, তাদের পরিচয় যতই শক্ত হোক না কেন, অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। বিশ্ববিদ্যালেয় প্রশাসন এবং গোয়ান্দা সংস্থা সর্বদা তৎপর রয়েছেন। আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত প্রমাণসাপেক্ষ অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে