রাজশাহীতে রাতের অন্ধকারে অন্যের জমিতে পুকুর খনন, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২২; সময়: ১১:০৮ অপরাহ্ণ |
রাজশাহীতে রাতের অন্ধকারে অন্যের জমিতে পুকুর খনন, গ্রেপ্তার ১

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা : রাজশাহীর বাঘায় রাতের অন্ধকারে পুকুর খনন করে অন্যের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জমির মালিক বাঘা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ শুক্রবার ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং খননযন্ত্রের ব্যাটারি জব্দ করেছে। অপর দুই আসামি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম নাজিম উদ্দিন (৪৫)। তার বাবার নাম খলিলুর রহমান। বাড়ি উপজেলার আরিফপুর গ্রামে। পুলিশ শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজাতে প্রেরণ করেছেন। মামলার অপর দুই আসামি হচ্ছেন বুলবুল আহমেদ ও তছলিম উদ্দিন। তাদের বাড়িও একই গ্রামে। ভুক্তভোগী জমির মালিকের নাম ছাপান আলী। তার বাড়ি উপজেরার নওটিকা গ্রামে।

তিনি বলেন, গ্রামের বিলের সব ধানি জমিতে পুকুর খননের কারণে আবাদ করার জমি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার জমিতেও মামলার তিন আসামি পুকুর খনন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি। তার সঙ্গে কোনো চুক্তিও হয়নি। টাকা পয়সাও লেনদেন হয়নি। হঠাৎ সকালে খবর পান যে তার জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

স্থানীয়রা জানান, নওটিকার বিল দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে এলাকার বর্ষার পানি নিম্নাঞ্চলে নেমে যায়। বিলের
তলায় বছরে একবার ধান চাষ হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিলে মাছ চাষের জন্য অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে পানি প্রবাহের প্রাকৃতি পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিলের ধারের দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিতেও আর ঠিকমতো আবাদ হচ্ছে না। জলাবদ্ধতার কারণে এলাকায় ছোট বড় অনেক আমগাছ মারা গেছে।

নওটিকা গ্রামের বাসিন্দা বয়েজুল ইসলাম জানান, তাদের আশঙ্কা পানি নিষ্কাশনের পথ বের করতে না পারলে সামনের বর্ষায় জমিতে আবাদও হবে না আবার মানুষের ঘরবাড়িও জলমগ্ন হয়ে যাবে। এই জন্য এলাকাবাসী আর বিলে পুকুর খননের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছে। কিছু দিন আগে এলাকাবাসীর বাধার কারণে একজন পুকুর ব্যবসায়ী পুকুর খনন করতে না পেরে ফিরে গেছেন। এই অবস্থায় রাতের অন্ধকারে পুকুর খনন করে অন্যের জমি দখলের চেষ্টার কারণে এলাকাবাসী ভীষণ ক্ষুব্ধ।

জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করে রাতের অন্ধকারে অন্যের জমিতের পুকুর খননের অভিযোগ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মামলার আসামি বুলবুল আহমেদ বলেন, এটাই নিয়ম-আগে পুকুর খনন করে নেওয়া হয়, পরে জমির মালিককে টাকা পয়সা দেওয়া হয়। এভাবেই সবাই পুকুর খনন করে। তারাও সেটাই করছিলেন।

তিনি দাবি করেন, মৌখিকভাবে জমির মালিককে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তিনি জমি দিতে সম্মত হয়েছিলেন। এখন হয়তো মিথ্যা কথা বলছেন। থানায় মামলা করেছেন। তাদের আর কিছু বলার নেই।

এ ব্যাপারে বাঘা থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, সকালে খবর পাওয়ার পরই পুলিশ পাঠিয়ে তিনি খনন যন্ত্রের ব্যাটারি খুলে নিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলেই মামলার একজন আসামিকে পাওয়া যায়। তাকে গ্রেপ্তার করে চালান দেওয়া হয়েছে। অন্য আসামিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ওসি বলেন, আদালত থেকে আসামি হয়তো জামিন পাবে, কিন্তু জামিন পাওয়াই যথেষ্ট হবে না। পুলিশ তদন্ত করে একটি প্রসিকিউশন দিবে। তখন তাকে আবার আদালতে যেতে হবে। বিষয়টি জটিল।

তিনি বলেন, এ ধরনের পুকুর খননের কারণে আগে শুধু ব্যাটারি খুলে নেওয়া হয়েছে। এই প্রথম আসামি গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে