‘মোর গেদু এইরহমের নিষ্ঠুর হইবে চিন্তাও হরি নাই’

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২২; সময়: ১১:১১ পূর্বাহ্ণ |
‘মোর গেদু এইরহমের নিষ্ঠুর হইবে চিন্তাও হরি নাই’

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ‘মোর গেদু এইরহমের নিষ্ঠুর হইবে চিন্তাও হরি (করি) নাই। কী কইছে আর কী হরলো?’

অবচেতনে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধা মাজেদা বেগম। বয়স ৭০ পেরিয়েছে। কয়েক মাস আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ‘ভালো চিকিৎসা’ করানোর আশ্বাস দিয়ে মাস দুই পার করে শেষে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডের পাশে ফেলে রেখে যান বৃদ্ধার ছেলে।

বর্তমানে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা চলছে তার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌকির আহম্মেদ বলেন, একদিনে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে মাজেদা বেগমের।

তবে শরীরে জ্বর রয়েছে। তাছাড়া তিনি অত্যাধিক দুর্বল। আমরা সার্বক্ষণিক তার খোঁজখবর নিচ্ছি। এমনকি তার পাশে একজন নার্স সবসময়ে সেবা শুশ্রুষা করছেন। তিনি বলেন, মাকে এভাবে ফেলে রেখে যাওয়াটা অন্যায়। আমার জীবনে এই ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে তা কল্পনাও করিনি।

বাসস্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা যুবক শিপন পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারী। তিনি বলেন, সোমবার রাত ১টার দিকে ফেসবুকে জানতে পারি বাটাজোর এলাকায় একজন বৃদ্ধা মাকে তার সন্তান ফেলে গেছেন।

খবরটি পেয়ে আর স্থির থাকতে পারিনি। কাছেই আমি থাকি। আমার এক বন্ধুকে নিয়ে এসে ওখানের একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মীর হেফাজতে থাকা বৃদ্ধাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন তিনি প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন।

মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তার জ্ঞান ফেরে। বিষয়টি আমি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারদের জানিয়েছি। তারা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যোগাযোগ করে সর্বাত্মক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন।

মোবাইল টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী করিম হাওলাদার বলেন, সোমবার রাতে ওই বৃদ্ধাকে অজ্ঞান অবস্থায় স্থানীয়রা পান। তারা আমার থাকার স্থানে তাকে রেখে যান। এ সময়ে কেউ হয়তো ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। পরে রাত ১টার পরে আগৈলঝাড়া ইউএনও অফিসের লোক এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

করিম বলেন, বৃদ্ধাকে যে অবস্থায় পেয়েছি তাতে আমি ও আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে গেছিলাম। তবে আমার স্ত্রী তাকে তাৎক্ষণিক সেবার ব্যবস্থা করেছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাজেদা বেগম জানান, পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার বাসিন্দা মৃত চাঁন মিয়ার স্ত্রী তিনি। তার ছেলে শাহ আলম ও তার স্ত্রী তাকে ‘ভালো চিকিৎসার’ কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে বের হন। বাসযোগে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এইখানে (বাটাজোর) নামেন তারা। এরপর আর ছেলেকে খুঁজে পান না।

ছেলে কী করেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি চুপ হয়ে যান। হাসপাতালের দায়িত্বরতরা বলছেন, মাজেদা বেগম এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না তার সন্তান তাকে সড়কে ফেলে রেখে যাবেন। তিনি মানসিকভাবে খুবই বির্পযস্ত।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বৃদ্ধা মা যতটুকু বলতে পারছেন সে অনুসারে তার বাড়ির ঠিকানা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া ছবি দিয়েও তার স্বজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

চিকিৎসার কথা বলে এভাবে ফেলে যাওয়া বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। যে বা যারা এমন কাজ করেছেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে