বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৭০০ কোটি টাকা!

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২২; সময়: ১০:১০ পূর্বাহ্ণ |
খবর > জাতীয় / লিড
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৭০০ কোটি টাকা!

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের ব্যয় আরও অন্তত ৭০০ কোটি টাকা বাড়ছে। এর মধ্যে শুধু স্ক্যানার কেনার ক্ষেত্রেই নতুনভাবে ব্যয় করতে হবে ৩৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া টানেলের দুই পাশে থানা ভবন ও ফায়ার স্টেশন নির্মাণসহ অন্যান্য ব্যয়ও এর সঙ্গে যুক্ত হবে।

সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় বেঁড়ে দাঁড়াবে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রকল্প ব্যয় বাড়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। টানেল দপ্তর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, যখন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং চীনের সঙ্গে টানেল নির্মাণের চুক্তি হয় তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮০ টাকা। অর্থাৎ ১ ডলারের বিনিময় হার ৮০ টাকা। বর্তমানে ডলারের মূল্য ৯৪ টাকা। তাছাড়া চীনের এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া ঋণের অর্থ ছাড়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছর। অথচ ৩০ কোটি ডলার এখনও উত্তোলনই করা হয়নি। যে কারণে ‘এক্সচেঞ্জ রেট’ বা বিনিময় মূল্য বাড়বে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে প্রকল্প ব্যয়ে।

এদিকে প্রাথমিকভাবে বিপুল অঙ্কের এই ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হলেও এখনও পর্যন্ত ‘রিভাইজ ডিপিপি’ তৈরি হয়নি বলে জানান টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ।

মঙ্গলবার বিকালে তিনি বলেন, রিভাইজ ডিপিপি এখনও ডিভিশন থেকেই বের হয়নি। তা বের হওয়ার পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) পাঠানো হবে অনুমোদনের জন্য। তখনই বলা যাবে আসলে ঠিক কী পরিমাণ ব্যয় বাড়বে। ব্যয় বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট তথ্য জানার জন্য তিনি আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলেন।

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, টানেলের প্রবেশপথে গাড়ি তল্লাশির বা পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্ক্যানার মেশিন বসাতে হবে। এই মেশিন স্থাপনের বিষয়টি প্রথম ডিপিপিতে (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল) ছিল না। টানেলের দুই পাশে থানা ভবন স্থাপনের বিষয়টিও তখন আসেনি। নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করতে হবে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনও। এসব খরচও যুক্ত হবে প্রকল্পে।

তবে ব্যয়বৃদ্ধির চিন্তায় হতাশ না হয়ে কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ জোরেশোরে এগিয়ে নিচ্ছে। নির্ধারিত সময় অর্থাৎ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে টানেলের ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে চলছে কর্মযজ্ঞ। পদ্মা সেতুর পর টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে আরেকটি উৎসবের জন্য অপেক্ষা করছে চট্টগ্রামসহ দেশবাসী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নদীর তলদেশে এই প্রথম কোনো টানেল নির্মাণ হচ্ছে।

এ কারণে এই টানেল নিয়ে আগ্রহেরও শেষ নেই। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে কর্ণফুলীর দুই তীরে বাড়বে কর্মব্যস্ততা। বিশেষ করে কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালী, মহেশখালী, কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্বও নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন্স কোম্পানি লিমিটেডকে (সিসিসিসি) দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বঙ্গবন্ধু টানেলের নিরাপত্তা বিবেচনায় দুই পারে আলাদা দুই থানা স্থাপনের প্রস্তাবও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। প্রকল্প দপ্তর সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু টানেলে উচ্চ ঝুঁকির তিনটি ক্রস প্যাসেজ থাকবে। এর মধ্যে একটির কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অপর দুটির কাজও এগিয়ে চলেছে।

টানেলের অভ্যন্তরে দুই টিউবের মধ্যে প্রথম টিউবের লেন স্ল্যাব স্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবে লেন স্ল্যাব স্থাপন কাজ হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। টানেল অভ্যন্তরে ভেন্টিলেশন, কমিউনিকেশন সিস্টেমসহ অন্যান্য কাজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তথা মেটারিয়েন চীনের সাংহাই থেকে দ্রুত আনার প্রক্রিয়া চলছে। সাংহাইতে করোনার কারণে মার্চ থেকে টানেলের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম আনতে বিলম্ব হয়েছিল।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রকল্প ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব, নতুন করে স্ক্যানার কেনা ও দুই পাশে থানা ভবন ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ খরচ যুক্ত হচ্ছে। এ কারণে প্রকল্প ব্যয় ৭০০ কোটি টাকা বেড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বা তারও বেশি হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাই সিটির আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই টানেলে টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ টানেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে