সত্তরে পা দিলো রাবি

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২২; সময়: ১১:৩০ অপরাহ্ণ |
সত্তরে পা দিলো রাবি

লাবু হক : দেশের উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উচ্চশিক্ষায় আলোকিত করার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠ ৬৯ বছর অতিক্রম করে আজ ৭০ বছরে পা দিল।

বর্তমানে গুণগত শিক্ষা প্রদান, গবেষক তৈরি, শিক্ষা-সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সংকটের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয়টি রেখে চলেছে অসামান্য অবদান।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর দেশের সব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় স্যাডলার কমিশন রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে।

১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পরে ১৯৫৩ সালে ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৫৩’ পাস হয়। ওই বছর ৬ জুলাই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩৮ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। ১২টি অনুষদের আওতায় ৫৮টি বিভাগে চার বছর মেয়াদি স্নাতক এবং এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে প্রতিষ্ঠানটি। এমফিল ও পিএইচডিসহ উচ্চতর গবেষণার জন্য এখানে রয়েছে ৬টি ইন্সটিটিউট।

শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও গবেষণা কাজে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনার দায়িত্বে রয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৬টি। গতবছর বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্ইুজন ইমেরিটাস অধ্যাপক মারা যাওয়ায় বর্তমানে রয়েছেন একজন ইমেরিটাস অধ্যাপক।

ঐতিহাসিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অসামান্য অবদান। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে শহীদ হন তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা। এছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হবিবুর রহমান, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইয়ুমসহ অনেকে।

জানতে চাইলে রাবি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠা বার্র্ষিকীতে ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে না। সেই অর্থ বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এছাড়া দিনটি উপলক্ষে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে এদিন সকালে পতাকা উত্তোলন, বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপন, আলোচনা সভা ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অন্যতম।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় যথেষ্ট এগিয়ে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ৬৯ পেরিয়ে ৭০ বছরে পদার্পণ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হতে যাচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গৌরবের।

দিন দিন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সামনে আমাদের লক্ষ্য হলো বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা, গবেষণা এবং পঠন-পাঠনের মানোন্নয়নে সর্বাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্য, আবাসন, খাদ্য, সংস্কৃতি এবং খেলাধূলার বিষয়গুলো অধিকতর উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া। এছাড়া র্শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষমুখী, গবেষণামুখী এবং গ্রন্থাগারমুখী করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া।

উপ-উপাচার্য বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকবেলার জন্য যেন আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি এবং বাস্তবজীবনে তার যেন সঠিক জায়গায় পদার্পণ করতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে সেটিই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মূল লক্ষ্য। এসময় শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, সেশনজট মুক্ত ও গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় যাতে সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে সে প্রচেষ্টা সবসময় অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে