৩০ মণের ইউটিউবার, ৩২ মণের চিরকুমার

প্রকাশিত: জুলাই ৫, ২০২২; সময়: ১:২০ অপরাহ্ণ |
৩০ মণের ইউটিউবার, ৩২ মণের চিরকুমার

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের দুই গ্রাম পশ্চিম কুমরী ও কুমরী মুদিপাড়ায় এখন আলোচনার মূল বিষয় ইউটিউবার ও চিরকুমার। এদের আকৃতি ও সৌন্দর্য নজর কেড়েছে সবার।

কেউ কেনার আশায় দেখতে আসছেন, আবার অনেকে শুধু এত বড় ষাঁড় দুটি সামনাসামনি দেখার জন্যই আসছেন।
৩০ মণ ওজনের ইউটিউবারের মালিক পশ্চিম কুমরীর সুমন মিয়া নিজেও একজন ইউটিউবার। ইউটিউব থেকে আয় দিয়ে তার সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা, গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। খামারে চারটি গরু আছে। এর মধ্যে দুটি ষাঁড়, একটি গাভী ও আরেকটি বাছুর।
সুমন বাংলাকে বলেন, ‘আমি ইউটিউবে কাজ করেই সবকিছু করেছি। ইউটিউবের রোজগার দিয়ে প্রথম কেনা গরুর নামও রেখেছি ইউটিউবার। আমি ইউটিউবারকে ঘরের বাইরে বের করি না। কেউ কিনতে চাইলে খামারে আসতে হবে। সাত লাখ টাকা হলেই দিয়ে দেব।

‘আরেকটা যে ষাঁড় আছে সাথি সেটা ইউটিউবারের মতো এত বড় না। সাথিকে বিক্রি করব ৩ লাখ টাকায়। ষাঁড়গুলো প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার খাবার খায়। তিন থেকে চারবার গোসল করাতে হয়। গোয়ালে ফ্যান আছে যেন গরম না লাগে।’

সুমন জানান, কোনো মোটাতাজা করার ওষুধ খাইয়ে নয়; ভুসি, খড়, ঘাস ও কলা খেয়ে এত বড় হয়েছে ইউটিউবার। গরুর পরিচর্যায় তাকে সাহায্য করেছেন মা-বাবাও।

চার বছর আগে ৯৭ হাজার টাকায় একটি ষাঁড় কিনেছিলেন কুমরী মুদিপাড়ার কৃষক ইব্রাহিম মিয়া। এখন সেই ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৩২ মণ। অনেকদিন ধরে পালছেন বলে ইব্রাহিম এই ষাঁড়ের নাম রেখেছেন চিরকুমার।
অস্ট্রেলিয়ান হলস্টেল ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির দাম চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

ইব্রাহিম বলেন, ‘গত চার বছরে ষাঁড়টির প্রতি আমার ভীষণ মায়া পড়ে গেছে। চিরকুমার আমাকে দেখলে খুশি হয়। আমিও চিরকুমারকে ছাড়া থাকতে পারি না। বিক্রি করতে মন চায় না কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এ জাতের গরুর বয়স সাড়ে চার বছর পার হলে বেশ ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া ওজন বেশি হয়ে গেলে মানুষের মতো গরুরও নানা সমস্যা হয়। তাই বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

‘গত বছরও চিরকুমারকে হাটে তুলেছিলাম। তখন ভালো দাম না পাওয়ায় বেচতে পারি নাই। গতবার হাটে তোলার সময় চিরকুমারের ওজন ছিল ২০-২২ মণ। প্রতিদিন তাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার খাবার খাওয়াতে হয়। ভুসি, খড়, ঘাস দেই। দুই-তিনবেলা গোসল করানো হয়।’

এখন পর্যন্ত একজন ক্রেতা চিরকুমারের সর্বোচ্চ দাম বলেছেন ৬ লাখ টাকা।

দুই খামারিই জানান, নিত্যপণ্য ও গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে কোরবানির বাজারেও। গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেড়েছে। খরচ অনুযায়ী এই দাম বেশি না। বাহারি নামের বিরাট আকারের এই দুই ষাঁড় নিয়ে উৎসাহী আশপাশের এলাকার মানুষ।

ঝিনাইগাতী থেকে ইউটিউবারকে দেখতে আসা মো. খাইরুল বলেন, ‘আমি কখনও এত বড় ষাঁড় দেখিনি। ইচ্ছা ছিল দেখার। তাই অনেক দূর থেকে হলেও এসে দেখে গেলাম। ষাঁড়টা দেখে খুব ভালো লাগল।’

শেরপুর শহর থেকে আসা জুবাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে শুধু বলে, বাজিতখিলায় বড় বড় ষাঁড় পেলেছে। তাদের কথা শুনে আজ দেখতে এলাম। এসে দেখি সত্যিই অনেক বড় ষাঁড়। তাই একটা সেলফিও নিলাম।

‘সবসময় টিভিতে দেখি, বড় বড় গরু কোরবানির হাটে ওঠে। আজ বাস্তবে দেখলাম।’

ইউটিউবারকে ফেসবুকে দেখেছেন হেলাল উদ্দিন। সেখান থেকেই এই গরু সামনাসামনি দেখার আগ্রহ জন্মে। দেখেও গেছেন খামারির বাড়ি এসে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ বছর শেরপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা ৫৫ হাজার ৪৬৫টি। প্রস্তুত করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৪১৭টি। প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পশু বেচা-কেনা হবে বলে ধারণা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শেরপুরের খামারিরা প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে ষাঁড়গুলো বড় করেছেন। ষাঁড়গুলো অনেক বড় আর মোটা। তবে এ ধরনের বিশাল ষাঁড় সাড়ে চার বছর হলেই বিক্রি করে দেয়া ভালো। নাহলে গরুর উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যা হয়।

‘আমরা হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা রেখেছি। জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৭টি কোরবানির হাট ও ছয়টি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। প্রাণিসম্পদ অফিসের উদ্যোগে পুরো জেলায় ২৩টি ভেটেনারি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। আশা করছি, ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির পশু কিনতে পারবেন।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে