‘ঈদে গবাদিপশু ও চামড়া পাচাররোধে কঠোর বিজিবি’

প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২২; সময়: ১০:২৯ অপরাহ্ণ |
‘ঈদে গবাদিপশু ও চামড়া পাচাররোধে কঠোর বিজিবি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ বলেছেন, ‘ঈদের আগে যাতে গবাদি পশুর চোরাচালান না হয় এবং ঈদের পরে যেন চামড়া পাচার না হয় সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই বিষয়ে আমরা প্রত্যেকটা সেক্টরে বিশেষ নির্দেশিকা দিয়েছি। বিশেষ করে যে এলাকাগুলোতে চামড়া পাচারের প্রবণতা বেশি সেই এলাকায় কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। আমরা আশা করি, এবার চামড়ার চোরাচালান রোধ করতে শতভাগ সফল হবো।’

সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ রাজশাহী সেক্টর ও ব্যাটালিয়নের ২২৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘ঈদের আগে গবাদি পশুর চোরাচালান বেড়ে যায়। আমরা এবার চেষ্টা করছি, যাতে করে ভারত কিংবা অন্য কোনো সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশু বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। কারণ, আমাদের দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মিটবে বলে খামারিরা আমাদেরকে জানিয়েছেন। এজন্য প্রত্যেকটি ব্যাটালিয়ন, সেক্টর এবং বিওপিকে সতর্ক অবস্থান রাখা হয়েছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল সাকিল বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মপরিধি অনেক বাড়িয়েছি। আমাদের বিওপি ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমরা এখন চেষ্টা করছি, এক বিওপি থেকে আরেক বিওপি’র দূরত্ব আরো কমানোর জন্য। ইতোমধ্যেই আমরা বিওপিতে জনবল অনেক বাড়িয়েছি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো এলাকাতে যদি জনবল বেশি প্রয়োজন হয় তাহলে অন্য এলাকা থেকে রিসোর্স সেখানে বাড়াই। মোটকথা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান কিংবা অবৈধ পাচাররোধে বিজিবি সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।

এর আগে সোমবার (৪ জুলাই) রাজশাহী ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রীতিভোজ ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়। ১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিনের প্রশিক্ষণ মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রংপুর রিজিয়ন সদর দপ্তরের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নওরোজ, রাজশাহী ১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, পরিচালক লে. কর্নেল বাব্বির আহমেদ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মো. মজিদ আলী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিজিবি-১ ব্যাটালিয়নের গার্ড অব অর্নার অর্ডার গ্রহণ করেন মহাপরিচালক। এরপর তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর প্রীতিভোজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিজিবি মহাপরিচালক।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রতিটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সেই নীতি অনুসরণ করছে। বিজিবিও এর বাইরে নয়।’

উল্লেখ্য, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক ১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ১৭৯৫ সালে ২৯ জুন এ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাকালীন একমাত্র ব্যাটালিয়ন হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়ে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে পথ চলা আরম্ভ করে।

বর্তমানে ১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন নামে বিজিবির রংপুর রিজিয়নের রাজশাহী সেক্টরের অধীনে রাজশাহী সীমান্তে নিয়োজিত রয়েছে। কালের পরিক্রমায় এ ব্যাটালিয়নের অনেক অর্জন বিজিবি’র ইতিহাসকে করেছে সমৃদ্ধ । প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ব্যাটালিয়নের সদস্যবৃন্দ অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে।

ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ১৮৭১ সালে লুসাই অভিযানে এই ব্যাটালিয়নের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং গৌরবময় ছিল। পূর্ব পাকিস্তান সরকারে অধীনে ১৯৫৮ সালে লক্ষীপুর অভিযান, ১৯৬২ সালে আসালং সংঘর্ষে এ ব্যাটালিয়নের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং গৌরবময় ছিল।

লক্ষীপুর অভিযানে অংশগ্রহণকারী তৎকালীন ইপিআর এর ১নং উইং অধিনায়ক মেজর তোফায়েল মাহমুদ এবং জমাদার মোঃ আজম ৭ আগস্ট ১৯৫৮ সালে প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক দখলকৃত স্থান পুনঃরুদ্ধারের জন্য এই ব্যাটালিয়নের সৈনিকদের নিয়ে বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং হতাহতের পর শত্রু সেনাদের তাড়িয়ে দেন এবং শত্রু অধিনায়ককে বন্দী করেন। অভিযানে জাতীয় বীরের স্বীকৃতি স্বরুপ মেজর তোফায়েল মাহমুদকে ‘নিশান-ই হায়দার’ (মরনোত্তর) এবং জমাদার মো. আজমকে ‘সিতারা-ই-জুরাত’ (মরনোত্তর) এবং আরো কয়েকজন সৈনিককে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

১৯৫৭ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর এ ব্যাটালিয়ন কুমিল্লার কোটবাড়ীতে অবস্থান করে। এই সময়ে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে তৎকালীন ইপিআরের অন্যান্য ব্যাটালিয়নের মতো এ ব্যাটালিয়নের সৈনিকরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এসময় ২০ জন সৈনিক শাহাদত বরণ করেন। তারমধ্যে হাবিলদার জুম্মা মিয়া ও সিপাহী আবুল বাসার বীর বিক্রম (মরণোত্তর) এবং সিপাহী শরীফ বীর প্রতীক (মরনোত্তর) খেতাবে ভূষিত হন।

যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বাহিনীর পূর্ব নাম ইপিআরের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ রাখেন। তখন থেকে এ ব্যাটালিয়ন ১ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন নামে দায়িত্বপালন শুরু করে। ২০১০ সালে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০’ কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ ব্যাটালিয়নের নামকরণ করা হয়েছে ১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন। যার সদর দপ্তর বর্তমানে রাজশাহীতে অবস্থিত।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে