রাবিতে হলের দখল ছাড়তে নারাজ ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২২; সময়: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ |
রাবিতে হলের দখল ছাড়তে নারাজ ছাত্রলীগ

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে শেষ পর্যন্ত ২০ জন আবাসিক ছাত্রকে তুলতে পেরেছে হল প্রশাসন। শুক্রবার রাত ৯টায় শিক্ষার্থীদের হলে তোলার অভিযান শুরু হয়। এ নিয়ে রাতভর চলে ‘নাটকীয়তা’।

ছাত্রলীগের বাধার মুখে দফায় দফায় বৈঠক করে শনিবার ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাদের হলে তুলতে পারেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। ২০ জনের মধ্যে ১৫ জন তাদের কক্ষে উঠতে পেরেছেন। অন্য পাঁচজনের জায়গা হয়েছে হলে পুলিশের জন্য বরাদ্দ রাখা একটি কক্ষে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাবির হল থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের পর থেকে কক্ষটি ফাঁকা ছিল। চার আসনের এই কক্ষেই জায়গা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।

করোনার দীর্ঘ বন্ধ শেষে ক্যাম্পাস খুললে হলগুলোতে সিট দখলের অভিযোগ তীব্র হয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন হলে সিট দখল নিতে তালা লাগাতেও দেখা যায়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে দখল করে থাকা অবৈধ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে বরাদ্দ পাওয়া ৪৪ জন শিক্ষার্থীকে সিটে তুলতে অভিযানের ঘোষণা দেন প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন।

গত ২৩ জুন প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সব অনাবাসিক ছাত্রকে হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। বের না হলে ১ জুলাই অভিযান চালিয়ে অবৈধদের বের করে সিট পাওয়া ছাত্রদের তুলে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

শুক্রবার বিকেল ৪টায় অভিযান শুরু করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ৪টার আগে থেকে শিক্ষার্থীরা হলে ওঠার জন্য হলের সামনে এসে জড়ো হন। তবে রাত ৯টার আগে অভিযান শুরু করতে পারেননি প্রাধ্যক্ষ। তিনি ৫টার পর হলে আসেন। সন্ধ্যা ৬টার পর হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফেরদৌসী মহল সোহরাওয়ার্দী হলে আসেন।

তিনি এসেই উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীসহ সবাইকে হল থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। পরে হল প্রশাসনের সঙ্গে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে মিটিংয়ে বসেন। সন্ধ্যা ৭টার পর জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. তারেক নূর হলে আসেন। এসে তারা হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো শুরু হয়।

রাত ১২টা পর্যন্ত ১১ জনকে বিভিন্ন কক্ষে তুলে দেওয়ার পর ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ নেতাকর্মীদের নিয়ে হলে আসেন। তারা কয়েকটি কক্ষ থেকে তাদের পছন্দের ছাত্রদের নামাতে নিষেধ করেন। এমনকি হল প্রশাসনের তুলে দেওয়া কয়েকজনকে অন্য কক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানান্তর করা হয়।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আশিকুল ইসলামকে প্রথমে হলের ১৪৫ নম্বর কক্ষে তুলে দেওয়া হয়। রাত ১২টার পর তাঁকে ৪২১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিশারিজ বিভাগের স্বাধীন আহমেদকে প্রথমে তাঁর বরাদ্দ পাওয়া ২৫৪ নম্বর কক্ষে তোলা হয়। পরে সেখান থেকে নামিয়ে ১৫৬ নম্বর কক্ষে নেওয়া হয়। ছাত্রলীগের বাধার কারণেই এভাবে এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে শিক্ষার্থী সরানো হয় বলে জানা গেছে।

প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২০ জন আবাসিক ছাত্রকে হলে তুলে দিতে পেরেছি। হল ছাত্রলীগ নানাভাবে চাপ দিচ্ছিল যাতে অভিযান না চালাই। আবাসিকতা পাওয়া সব ছাত্রকেই ক্রমান্বয়ে হলে তুলে দেব। আমি চাই হলে অবৈধ কোনো ছাত্র যেন না থাকে। এই ২০টি সিট রাজনৈতিক নেতাদের সম্মতিতে অবৈধভাবে দখলে ছিল। তাদের বের করা হয়নি। যারা তুলেছে তারাই তাদের অন্য কক্ষে নিয়ে গেছে। কয়েকজন হল থেকে চলে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানা সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে হলে গিয়েছিলাম। হল চলবে প্রশাসনের নির্দেশ মতো। হল প্রশাসনকে বলেছি যেন সবার সুবিধা-অসুবিধা দেখা হয়। অনেকে পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে হলে ওঠে। এমন অনাবাসিক ছাত্রকে বের না করে তাদের আবাসিকতা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি প্রাধ্যক্ষকে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ‘পক্ষ’ হয়ে বৈঠকে ছাত্র উপদেষ্টা ড. তারেক নূর সমঝোতার প্রস্তাব দেন বলে জানা গেছে। শুক্রবারের সন্ধ্যার বৈঠকে ছাত্রলীগ সাতটি আসন ছাড়তে রাজি হয়। বৈঠকে ছাত্র উপদেষ্টা বিষয়টির সমঝোতা করেন। ছাত্রলীগ সাতটি আসন ছাড়লেও অন্য আসনগুলোতে থাকা অবৈধদের সরিয়ে সেখানে সিট পাওয়াদের তোলার কথা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত হলের এক আবাসিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রলীগ সাতটি সিট ছাড়তে রাজি হয়েছে। ছাত্র উপদেষ্টা ছাত্রলীগের এই প্রস্তাব বৈঠকে তুলে ধরে সমঝোতা করে দেন। ছাত্রলীগ যে সাতটি আসন ছাড়তে চায় তারা প্রশাসনকে ওই তালিকাও দেয়। তবে হল প্রশাসন তালিকা না দেখে নিজেদের মতো করে অবৈধদের নামিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তুলতে গেলে ছাত্রলীগ এসে বাধা দেয়। পরে আবারও কয়েক দফা বৈঠক হয়। শেষ পর্যন্ত পাঁচজনকে তুলে দেওয়ার মতো কোনো কক্ষ না পেয়ে হলের পুলিশ কক্ষে রাখা হয়েছে।

হল প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেনের অভিযানের বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি ছাত্রলীগ। অভিযানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে তাকে ছাত্রলীগ নানা রকম হুমকি দিচ্ছে বলেও তিনি গণমাধ্যমকে অভিযোগ করেছিলেন।

শুক্রবার অভিযান শুরুর আগে সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, প্রভোস্ট হলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগ নিধনের মিশনে নেমেছে। তবে আমি ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় একজন কর্মীকে নামতে দেব না। বিষয়টি উপাচার্যকে জানিয়েছেন এবং উপাচার্য কাউকে বের না করতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। সূত্র- সমকাল

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে