রাবির হলে রাতভর অভিযান, অনাবাসিকদের উচ্ছেদ

প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২২; সময়: ৪:২৬ অপরাহ্ণ |
রাবির হলে রাতভর অভিযান, অনাবাসিকদের উচ্ছেদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে ভোররাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অবৈধ ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের উচ্ছেদ করেছে হল প্রশাসন। এসময় বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থীদের কক্ষে তুলে দেয় হল প্রাধ্যক্ষ।

শুক্রবার (১ জুলাই) রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এই অভিযান পরিচালনা করেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আসন বরাদ্দ নিয়ে বিশৃঙ্খলা ও ছাত্রলীগের দাপটে অসহায় হয়ে থাকা হল প্রশাসনের এমন উদ্যোগে উচ্ছ্বস প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, গত ২৩ জুন হল হলের দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে অনাবাসিক ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের ২৯ জুনের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। কোনো শিক্ষার্থী তার সমস্যার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ২৮ জুনের মধ্যে অভিভাবকসহ হল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে শর্ত অনুযায়ী কেউ দেখা না করলে কিংবা অনাবাসিক কোনো শিক্ষার্থী নেমে না গেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেয়া হয়।

হল সূত্রে জানা যায়, করোনার দীর্ঘ ছুটিতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৯৪টি আসন খালি থাকার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদনপত্র আহ্বান করে হল প্রশাসন। পরে মৌখিক মাধ্যমে একাডেমিক ফলাফলসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে ৬৬ জন শিক্ষার্থীকে সিট বরাদ্দ দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৪০ জন সিটে উঠলেও বাকি ৫৪টি আসন অনবাসিকদের দখলে ছিল।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বঘোষণা দিয়ে হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তুলে দিতে শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত অভিযান চালায় সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় বৈঠক চলে। এতে হলের অনাবাসিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নামিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিটে তুলতে বেগ পেতে হয় প্রাশাসনকে। তবে শেষ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১৮ জন আবাসিক শিক্ষার্থীকে হলে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

এই অভিযানের হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ অভিযোগ করে বলেন, প্রাধ্যক্ষ হল থেকে ছাত্রলীগ নামিয়ে বিএনপি-জামায়াত এজেন্ডা প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। তিনি সিট থেকে ছাত্রলীগ নামানোর মিশনে নেমেছেন। কিন্তু তা হতে দেয়া হবে না। হল থেকে কোনো ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নামাতে হলে, আগে আমাকে এই হল থেকে বহিষ্কার করে ছত্রলীগকে নামাতে হবে।

তবে এমন অবস্থায় সিটে অবস্থান করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে রাত্রীযাপন করে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিটে তুলে দেয়ায় প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৈধভাবে সিটে উঠতে পেরে উচ্ছ্বসিত তারা।

অভিযান শেষে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সিট কেন্দ্রিক সমস্যাটা হলের সার্বিক কাজকে ব্যাহত করছে। যার জন্য হলের অন্য উন্নয়ন মূলক কাজে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনাবাসিক মুক্ত হল নিশ্চিত করে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ আমরা চাই, বৈধভাবে আবাসিক শিক্ষার্থীরাই হলে থাকুক। তাই এই রাত জেগে এই কার্যক্রম। ১৮ জন আবাসিক শিক্ষার্থীকে সিটে তোলা হয়েছে। যার মাধ্যমে একটি শুভ সূচনা হলো।

সিটে তোলা শিক্ষার্থীদের শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, যাদের সিটে তোলা হয়েছে, তারা সেই সিটে শেষ পর্যন্ত থাকবে। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা করে, তবে প্রশাসনকে অবিহিত করার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এমনকি কোন আবাসিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে তাকে হল থেকে বহিস্কার করা হবে।

চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফেরদৌস মহল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সমন্বিতভাবে কাজ করছে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ।

আমরা চাই, হলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থেকে পড়াশোনা করুক। কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টি না হোক। একই সাথে বৈধভাবে আবাসিক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করুন, সেই লক্ষ্যে সমন্বিত কাজ করছে প্রশাসন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে