ঈদুল আজহা ও কোরবানি বিষয়ক হাদিস

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২২; সময়: ৪:৪১ অপরাহ্ণ |
খবর > ধর্ম
ঈদুল আজহা ও কোরবানি বিষয়ক হাদিস

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ঈদুল আজহা বা ইয়াওমুন নাহর। আমাদের দেশের ভাষায় যাকে কুরবানি ঈদ বলে। ঈদুল আজহার প্রধান আমল কোরবানি। কোরবানি শা‘আইরে ইসলাম তথা ইসলামি নিদর্শনাবলীর অন্যতম।

এ শরীয়তে কোরবানির যে পন্থা ও পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে তার মূলসূত্র ‘মিল্লাতে ইবরাহীমী’তে বিদ্যমান ছিল। কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কোরবানীকে ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ নামে অভিহিত করা হয়।

ইসলামে দুই ঈদ: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। হজরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় আসলেন তখন মদীনাবাসীর দুটি উৎসবের দিবস ছিল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিবস কী? তারা বলল, জাহেলিয়াত তথা ইসলামপূর্ব যুগে আমরা এ দিন দুটিতে উৎসব পালন করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে এ দুটি দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন, ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১১৩৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৫৫৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২০০৬)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় মাওলানা মনযূর নোমানী (রাহ.) তার বিখ্যাত কিতাব ‘মাআরিফুল হাদীস’-এ লেখেন, ‘বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের উৎসবসমূহ প্রকৃতপক্ষে তাদের আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের মুখপাত্র এবং তাদের জাতীয় চরিত্রের দর্পণ হয়ে থাকে। এ কারণে একথা স্পষ্ট যে, ইসলামের আগে জাহিলিয়্যাতযুগে মদীনার লোকেরা যে দুটি উৎসব পালন করত এগুলো জাহিলী চরিত্র ও চিন্তা-চেতনা এবং জাহিলী ঐতিহ্যেরই দর্পণ ছিল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম; বরং হাদীসের শব্দমালা অনুযায়ী স্বয়ং আল্লাহ তাআলা এ প্রাচীন উৎসবগুলোকে বাতিল করে দিয়ে এগুলোর স্থলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দুটি উৎসব উম্মতের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা এ উম্মতের তাওহীদী চরিত্র ও জীবনধারার সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার আয়না স্বরূপ।

মুসলমানেরা যদি নিজেদের এ উৎসবগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষা ও হেদায়েত অনুযায়ী উদযাপন করেন তাহলে ইসলামের প্রাণবস্তু ও এর মর্মবাণীকে বুঝা ও বুঝাবার জন্য কেবল এ দুটি উৎসবই যথেষ্ট হতে পারে।

উপরোক্ত হাদীসের শিক্ষার আলোকে মুসলিমগণ নিজ নিজ এলাকার উৎসবকেও বিবেচনায় আনতে পারবেন এবং নিজেদের করণীয় সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা লাভ করতে পারবেন।

ঈদ আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশিত হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে ‘ইয়াওমুল আজহা’র আদেশ করা হয়েছে (অর্থাৎ, এ দিবসে কোরবানি করার আদেশ করা হয়েছে); এ দিবসকে আল্লাহ তাআলা উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫৭৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫৯১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫)

ঈদুল আজহার দিন নবীজী নামাজের পরে খেতেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কোনো কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। আর ঈদুল আজহার দিন নামাজ না পড়ে কিছু খেতেন না। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৫৪২)

নবীজী পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন, পায়ে হেঁটে ফিরতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ঈদগাহ থেকে ফিরতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২৯৫)

নবীজী এক পথ দিয়ে যেতেন, ভিন্ন পথে ফিরতেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন এক পথ দিয়ে যেতেন এবং ভিন্ন পথ দিয়ে ফিরতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯৮৬)

জুবায়ের ইবনে নুফাইর (রাহ.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন, ওয়া মিনকা মিন্নাল্লাহু তাকাব্বাল। অর্থাৎ আল্লাহ কবুল করুন আমাদের পক্ষ হতে ও আপনার পক্ষ হতে। (ফাতহুল বারী ২/৫১৭)

নবীজী প্রতিবছরই কোরবানি করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দশ বছরের প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৯৫৫)

এবং কোরবানির জন্য কোরবানির উট অন্তত পাঁচ বছর বয়সী হতে হবে। গরু, মহিষ দুই বছর এবং ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এক বছর হতে হবে। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ভেড়া ও দুম্বা ছয় মাসের হলেও চলবে। আল্লাহ প্রত্যেক সামর্থ্যবানকে একমাত্র তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করার তাওফীক দিন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে