জমি নিয়ে হয়রানির শিকার ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ বসাক

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২; সময়: ৮:৫৯ অপরাহ্ণ |
জমি নিয়ে হয়রানির শিকার ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ বসাক

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অবহেলায় প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক এর জমি ১৮ বছর ধরে দখল করে রেখেছে একটি ওয়াকফ্ এস্টেটের মোতোয়ালি। অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এবং পদার্থবিজ্ঞানে দেশের একমাত্র ইমেরিটাস অধ্যাপক।

তার বাড়ি রাজশাহীর সাগরপাড়া এলাকায়। বসতবাড়ির জমির দক্ষিণ পাশেই ওয়াকফ্ এস্টেটের অবস্থান। এর মোতোয়ালি ইমাম ইয়াহিয়া ফেরদৌস। ন্যায় বিচারের দাবিতে অধ্যাপক অরুণের আবেদনগুলোতে আরডিএ তেমন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইয়াহিয়া ফেরদৌস ১৮ বছর ধরে ৮২ বছর বয়সী এই শিক্ষাবিদকে হয়রানি করছেন।

গত মে মাসে ফেরদৌস একটি আইনি লড়াইয়ে হেরে যান এবং দখলকৃত জমিতে নির্মিত একটি অবকাঠামো অপসারণে বাধ্য হন। তবে, এখনও জমির দখল ছাড়েননি ফেরদৌস। গ্রিল দিয়ে জমিটি ঘিরে রেখেছেন বলে জানান অধ্যাপক অরুণ বসাক।

অধ্যাপক অরুণ বসাক বলেন, আমি পড়াশোনা আর গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। সম্পত্তির দেখাশোনা করতে পারিনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে আমার প্রতিবেশী (ফেরদৌস)। এখন আমি নিজের বাড়িতেই অনিরাপদ বোধ করি।

অধ্যাপক অরুণ বলেন, এই জমির সমাধান খুঁজতে দুয়ারে দুয়ারে গিয়েছি, কিন্তু লাভ হয়নি। কেউই আমাকে সাহায্য করেননি।

অধ্যাপক অরুণের বসতবাড়ির জমিটি ছিল তার স্ত্রী দেবিকা বসাকের। ২০২০ সালের নভেম্বরে দেবিকা বসাকের মৃত্যুর পর নিঃসন্তান অধ্যাপক অরুণ জমিটির মালিকানা পান। ২০০৩ সালে নিজের জমিতে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের সময় দেবিকার জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ২ ফুট ভেতরে গিয়ে ভবনের অংশ নির্মাণ করেন ফেরদৌস।

এরপর নির্মাণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে আরডিএর কাছে অভিযোগ করেন দেবিকা। ফেরদৌসের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে আরডিএ সময় নেয় ৭ মাস। ততদিনে জমির একটি অংশ দখল করে ফেরদৌস ভবন নির্মাণ শেষ করে ফেলেছেন। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য ফেরদৌসকে চূড়ান্ত নোটিশ দিতে আরডিএ ৫ বছর সময় নেয় এবং ২০০৮ সালের মে মাসে সেই নোটিশ দেয়।

ফেরদৌস সেই সিদ্ধান্তকে রাজশাহীর আদালতে চ্যালেঞ্জ করেন। একই সঙ্গে দেবিকার বিরুদ্ধে ওয়াকফ্ এস্টেটের জমি দখলের অভিযোগ আনেন। আদালত এই অভিযোগ খারিজ করে দেন। ২০১৪ সালে ফেরদৌস আপিল করলে জেলা আদালত বাদিকেই ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ২০১৭ সালে ফেরদৌস মামলাটি হাইকোর্টে নিয়ে যান।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আরডিএর সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেন। একই রায়ে হাইকোর্ট ফেরদৌসকে দেবিকার কাছে ক্ষমা চাইতে এবং অধ্যাপক অরুণ ও তার পরিবারকে হয়রানি না করার প্রতিশ্রুতি দিতে বলেন।

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, ২০২০ সালের অক্টোবরে ফেরদৌস তার অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে নিলেও এখনও জমির ওই অংশ দখল করে আছেন। তিনি জায়গাটির চারপাশে ধাতব গ্রিল ও গাছ লাগিয়ে রেখেছেন। এটা নিয়ে অধ্যাপক অরুণ আরডিএর কাছে অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার পাননি।

সেখানে লাগানো গাছগুলো কেটে ফেলবেন বলে জানিয়ে ইয়াহিয়া ফেরদৌস সাংসাদিকদের বলেন, আদালত আমাকে বলেছেন অধ্যাপক অরুণকে সন্তুষ্ট রাখতে।

তবে তিনি জানান, আরডিএ কর্মকর্তাদের পরামর্শ মতোই তিনি মামলাটি করেছিলেন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিককে পাওয়া যায়নি।

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে