স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘিরে যত ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২২; সময়: ১২:১২ পূর্বাহ্ণ |
স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘিরে যত ষড়যন্ত্র

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাঙালির গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। উদ্বোধনের অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। কিন্তু একটু পেছন ফিরলে দেখা যায় এ সেতু ঘিরে ছিল নানা ষড়যন্ত্র। ছিল দুর্নীতির কল্পিত অভিযোগ।

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। জোড়াতালি দিয়ে বানানো সেতুতে, কেউ উঠবেও না। এরপর একের পর এক পদ্মা সেতু বিরোধী মন্তব্য আসতে থাকে বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে।

রাজনৈতিক বিরোধিতার সুরে তাল মিলিয়ে ‘কান নিয়ে গেছে চিলে’ এমন রব তোলেন কয়েকজন সুশীলও। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার পদ্মা সেতু নিয়ে বলেছিলেন, দুর্নীতি আমাদের কীভাবে পেছনে নিয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি উদাহরণ এটি (পদ্মা সেতু)। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

সরকার সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করায় দুঃখ পান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছিলেন, প্রথম অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব হলো অভিযোগ অস্বীকার করে যাওয়া। অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দাতাগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

অপরদিকে দুদকের বিচার করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কোনো প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু কানাডার পুলিশ এসে এ দুর্নীতির প্রমাণ দিয়ে গেছে। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করার সামর্থ্য আছে কিনা দুদকের, সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে। এ ঘটনার তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা তাদের আছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

পদ্মা সেতু বিরোধী নানা মহলের সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে। সে সময়ে সংবাদমাধ্যমে ড. মসিউর রহমান আর্তি জানিয়ে বলেছিলেন, আপনাদের কাছে আমি সহানুভূতি চাই। আপনারা আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন।

শেষমেশ বাধ্যতামূলক ছুটিতে যেতে হয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টাকে, দেড় মাস জেল খাটেন সেতু সচিব, ২০১২’র ৫ জানুয়ারি পদত্যাগই করতে হয় তখনকার যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে। দফায় দফায় তাদের হাজিরা দিতে হয় দুদকে।

সৈয়দ আবুল হোসেন ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, কোনো অসৎ কাজে প্রাক্তন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন জড়িত নয়।

আরেকটু পেছনে ফেরা যাক, সেতুর অর্থায়নে শুরুতে এডিবি, এরপর যোগ দেয় বিশ্বব্যাংক। উন্নয়ন সংস্থাগুলো যোগ দিতে থাকে অর্থায়নে। এরপর কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন থেকে সরে যেতে থাকে সংস্থাগুলো। তাদের একটার পর একটা আবদার রক্ষার চেষ্টা করেও বিশ্বব্যাংককে ফেরানো যায়নি পদ্মায়। পরে জানা যায়, বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে ড. ইউনুসকে সরিয়ে দেয়ায় অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক।

২০১২ সালের ২৫ জুলাই লন্ডনে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যখন (পদ্মা সেতুতে) পরামর্শ নিয়োগের বিষয় এলো, তখন একটা কোম্পানির জন্য তারা (বিশ্বব্যাংক) বার বার চাপ দিচ্ছিল সরকারকে এবং যোগাযোগমন্ত্রীকে। যেন ওই কোম্পানিকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়। এখন যদি আমি প্রশ্ন করি, বিশ্বব্যাংক কত পার্সেন্ট টাকা খেয়ে ওই কোম্পানির জন্য তদবির করেছে?

কল্পিত সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হতে সময় লাগেনি বেশিদিন। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রায় দেন কানাডার আদালত। রায়ে বলা হয়, পদ্মা সেতুতের দুর্নীতির অভিযোগ গালগপ্প ছাড়া কিছুই নয়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের যে ক্ষতের জন্ম দেয় শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মার মূল সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় তা দেশের সক্ষমতা আর শৌর্যের প্রমাণ হয়ে এখন দাঁড়িয়ে পদ্মার বুকে।

আগামীকাল শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। গত ২৪ মে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ এবং নামকরণের সংক্ষিপ্ত তালিকা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

পদ্মা সেতু দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।

দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু।

পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে স্বপ্নের এ সেতু। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে