বাঁচবে সময় বাড়বে কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২; সময়: ১১:৪৬ অপরাহ্ণ |
বাঁচবে সময় বাড়বে কর্মসংস্থান

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : পদ্মা সেতু দিয়ে সড়কপথে সরাসরি ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে। শনিবার যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হবে এ সেতু।

কাঙ্ক্ষিত এ সেতুর মাধ্যমে একদিকে যেমন দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগসূত্র তৈরি হবে, ঠিক তেমনি এই সেতুকে ঘিরে ওই অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু এখন বড় স্বপ্নের বাস্তব রূপ। যে সেতু দিয়ে রাজধানীতে যাতায়াতে সময় লাগবে আগের তুলনায় অর্ধেক।

বলা হচ্ছে, এখন আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-কালবৈশাখীর মধ্যে লঞ্চে যাতায়াত কিংবা ফেরির যানজটের শঙ্কায় পড়তে হবে না এই অঞ্চলের মানুষের। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দুঃখ ঘুচবে, সেই সাথে পাল্টে যাবে তাদের অর্থনৈতিক জীবন।

সেতুর কারণে আসলে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে ওপারের জীবনমান। এ নিয়ে ইতিবাচক অনেক কিছুই ভাবছেন ওইসব অঞ্চলের স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের সাথে কথা বলে প্রতিনিধিরা জানালেন পদ্মা সেতুকে ঘিরে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা।

ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ঢাকা শহরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করবে। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।

আমাদের এখান থেকে ঢাকা যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। এখন যেখানে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। অনেকেই বাড়ি থেকে গিয়ে ঢাকায় অফিস করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের পাশের জেলা গোপালগঞ্জ। সেখানে কলকারখানা ও ইপিজেড হবে। আমাদের এখানকার লোকজনের কর্মসংস্থান হবে। তারা বাড়ি থেকে গিয়েই কারখানায় কাজ করতে পারবে। এতে আমাদের অঞ্চলের মানুষ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম হাবিবুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও দক্ষিণের মানুষ এতদিন অবহেলিত নিষ্পেষিত ছিল। আগামী ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু খুলে দিবেন। আমরা তাকে অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, আপনি দেখবেন ভাঙ্গা এলাকায় আসলে আপনি চিনতে পারবেন না এটা কোন বাংলাদেশ। মনে হবে আপনি কোন বাহিরের দেশে আছেন।

তিনি আরো বলেন, এখানের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে কল-কারখানা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য করে উঠবে সেখানে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ সরাসরি রাজধানীর সাথে যোগসূত্র তৈরি হবে।

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোল্লা জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে কি পরিবর্তন হবে সেটা দেশের সবাই জানে। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে আমাদের অঞ্চলের মানুষ মনে করে তারা বাইরের কোনো দেশে আছেন। আপনি যদি এই এলাকার সড়কগুলো দেখেন বুঝতে পারবেন না এটি বাংলাদেশের কোনো রাস্তা।

আমাদের এই এলাকায় যারা রাজধানীতে চাকরি করেন তারা অনেকেই চিন্তা করছেন ঢাকা শহরে এত টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থেকে কি লাভ। তারা এখন বাড়ি থেকেই অফিস করবেন চিন্তা করছেন। পদ্মা সেতু কে ঘিরে এই অঞ্চলের জমির দাম শতাংশ প্রায় কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী এখানে আগে থেকেই জায়গা কিনে রেখেছেন তাদের পরিকল্পনা এখানে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কল কারখানা তৈরি করবেন।

তিনি আরো বলেন, এখানে যখন কল কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এই অঞ্চলের মানুষ সেখানে কাজ করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা হাত ধরে সোনার বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে আমি তাকে শিবচর উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই তিনি আমাদের জন্য এমন একটি কাজ করেছেন।

যশোর জেলার শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, আপনারা জানেন আমাদের উপজেলাটি ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা। বেনাপোল বর্ডার এখানে সব সময় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যস্ত থাকে সবাই। পদ্মা সেতু হওয়ার মাধ্যমে আমাদের উপজেলা আগে থেকে আরও বেশি উন্নত হবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো বলেন, ভারত থেকে যে সব মালামাল বাংলাদেশে আসে এবং বাংলাদেশ থেকে যে সব মালামাল ভারতে যায় পদ্মা সেতু না থাকার কারণে তাদের ঘাট পারাপারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। সেতু চালু হলে সেই অপেক্ষার করতে হবে না।

সব তারা ভারতে মাল পৌঁছে দিয়ে দিনের বেলায় আবার তারা ফিরে যেতে পারবেন এবং যারা ভারতে থেকে মালামাল বাংলাদেশ আনবেন তারাও বাংলাদেশ থেকে কম সময়ে আবার ভারতে ফিরে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে দেশের আমদানি রপ্তানি আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে ঝড় বৃষ্টি হলে ফেরি বন্ধ থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের বসে থাকতে হত। এখন আর সেই চিন্তা করতে হবে না।

আর শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার জানান, শরীয়তপুর জেলা একটি অবহেলিত জেলা। পদ্মা সেতু না থাকার কারণে ঢাকার অদূরে পদ্মা নদীর পাড়ে শরীয়তপুর জেলা অবস্থিত। আমাদের এখানে আগে ফেরি ছিলনা। এখান থেকে ঢাকায় সরাসরি কোন পরিবহনে চলে না। মানুষ লঞ্চে করে নৌকায় করে স্টিমারে করে ঢাকায় যেত। আমাদের এখানে কল-কারখানা না থাকায় কর্মসংস্থানেরও অনেক অভাব।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার খবরে শরীয়তপুর বাসি অনেক আনন্দিত তথা জাজিরা বাসি অনেক আনন্দিত। এখন আমাদের এলাকার জায়গা জমির দাম অনেক বেড়েছে পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এখানে জায়গা কিনেছেন। সেতু চালু হওয়ার পরে এখানে কলকারখানা হোটেল মোটেল গড়ে উঠবে। সেখানে এই অঞ্চলের মানুষ কাজ করলে তাদের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরবে।

তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় অনেক শাকসবজি উৎপাদন হয়। যোগাযোগের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার কৃষকরা ভালো দাম পান না। যার কারণে এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। ফসল উৎপাদন করে তারা একটি হিমাগারে রাখবে এখানে সে ব্যবস্থাও নাই। আমি নিজ উদ্যোগে একটি হিমাগার করার পরিকল্পনা নিয়েছি সেখানে তারা তাদের উৎপাদিত সচল রাখতে পারবেন। ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু করার ঘোষণা দেওয়ায় জাজিরার মানুষের পক্ষ থেকে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই।

শরীয়তপুরের গাড়ী চালক মেহেদি হাসান রিপন বলেন, সেতুর জাজিরা প্রান্তে দিয়ে ৩০ বছর ধরে অনেক কষ্টে নদী পার হইতেছি। ঘাট পার হতেই জীবনটা শেষ হইয়া যায়। ২৫ তারিখে সেতু চালু হইলে আমাগো আর কষ্ট থাকব না। সাতক্ষীরা থেকে আম নিয়ে ঘাটে এসে বসে আছেন মোহাম্মদ হোসেন।

তিনি বলেন, আমি রাত তিনটার সময় এসেছি, এখন বাজে দুপুর ১২টা। কখন যে ঘাট পার হতে পারব তার নিশ্চয়তা নাই। গাড়িতে দেড় লক্ষ টাকার আম আছে, এই আমি সব পচে যেতে পারে! সেতু চালু হলে তখন আর এই টেনশন থাকবে না।

এদিকে, রেন্ট এ কারের চালক শাহিন আলম বলেন, আমার গাড়িতে একজন যাত্রী আছেন, তিনি বিদেশে যাবেন। ৮ ঘণ্টা ফেরি ঘাটে বসে আছি, এখনো ফেরিতে উঠতে পারিনি। ঘাটে বসে থাকলে আমাদের সব দিকে ক্ষতি।সেতু চালু হলে আমরা দিনে বেশি ট্রিপ মারতে পারব। এতে আয়-রোজগার বাড়বে। ফেরির কারণে যে ক্ষতি হতো তা আর হবে না জানিয়ে টেকেরহাট থেকে আসা মাইক্রোবাসের চালক লুৎফর রহমান বলেন, সকাল ১১টায় এসেছি এখন রাত ৯টা বাজে। এত ঘণ্টা ধরে ঘাটে বসে থেকেও নদী পার হতে পারিনি।

তিনি বলেন, সেতু হলে আমাদের টেকেরহাট থেকে ঢাকা যেতে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগবে। যেখানে এখন ঘাটেই বসে থাকতে হয় ১৩-১৪ ঘণ্টা।

বেসরকারি চাকরিজীবী শহিদুল ইসলাম বলেন, ফেরি পাওয়ার অপেক্ষায় অনেকক্ষণ বসে আছি। আমাদের বাড়ি শরীয়তপুর। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম, এখন ঢাকায় যাব। পদ্মা সেতু চালু হলে বাড়ি থেকেই চাকরি করতে পারব। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগবে ঢাকা যেতে। সকাল-বিকাল যাওয়া আসা করা যাবে- বলেন শহিদুল।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে