দুর্ঘটনায় চার শিক্ষক নিহত শোকে স্তব্ধ পরিবার

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২; সময়: ৭:২০ অপরাহ্ণ |
দুর্ঘটনায় চার শিক্ষক নিহত শোকে স্তব্ধ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : নওগাঁর ট্রাকের চাপায় শিক্ষক মকবুল হোসেন, শিক্ষক জান্নাতুন ফেরদৌসসহ চার শিক্ষক নিহতের ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে তাদের পরিবার। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন এই পরিবারের আরেক মেয়ে শিক্ষক নুরজাহান বেগম (৩০)। হঠাৎ ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক এ ঘটনায় বুকে পাথর চাপা দিয়ে শোক সইবার চেষ্টা করছেন নিহতের স্বজনেরা।

শুক্রবার দুপুরে নিহত জান্নাতুন ফেরদৌসীর বাড়িতে গিয়ে দেখা দেখা গেছে, পরিবারের লোকজন এখানে ওখানে বিচ্ছিন্নভাবে বসে আছেন। কেউবা আছেন দাঁড়িয়ে। তাঁদের ঘিরে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। এসময় দেখা গেছে নিহত জান্নাতুনের তিন বছর বয়সী মেয়ে জুয়াইরিয়াকে নিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন নানা আব্দুল গফুর। নানার কোলে বসে জুয়াইরিয়া আপন মনে মোবাইল নাড়াচাড়া করছে। জুয়াইরিয়ার বুঝতে পারছে না মা তাকে চিরতরের জন্য ছেড়ে চলে গেছে।

নিহত জান্নাতুনের বাবা আব্দুল গফুর বলেন, সকালে মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মেয়েকে কোলে দিয়ে দেখে রাখার জন্য বলেছিল। একই সঙ্গে দোয়া চেয়েছিল প্রশিক্ষণ শেষে যেন সুস্থভাবে বাড়ি আসতে পারেন। কিন্তু মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাত্র এক ঘন্টার ব্যবধানে আমাদের কাঁদিয়ে এভাবে চলে যাবে ভাবতেও পারছি না।

তিনি আরও বলেন, ছোট্ট বাচ্চাকে এতিম করে এক মেয়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছে। আরেক মেয়ে নুরজাহান বেগম মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে হাসপাতালে। এমন অবস্থায় কী করব ভাবতেও পারছি না।

স্থানীয়রা জানান, একই দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক মকবুল হোসেন ছিলেন আব্দুল গফুরের আপন ভাতিজি জামাই। এ কারণে তাঁর ভাই হারুন-অর-রশিদের বাড়িও একইভাবে স্তব্ধ হয়ে গেছে। স্তব্ধ হয়ে পড়েছে মকবুলের বাড়ি ও জান্নাতুনের শ্বশুর বাড়িও।

নিহত জান্নাতুনের ভাই আতাউর রহমান বলেন, প্রায় ৫ বছর আগে উপজেলার চন্দননগর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের ঘরে তিন বছর বয়সের একটি মেয়ে আছে। ২০২১ সালে এনটিআরসির মাধ্যমে গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয়ে বোনের চাকরি হয়। সেই থেকে আমাদের বাড়িতে থেকেই চাকরি করতেন। আমরা তাকে খুব স্নেহ করতাম। সেই আদরের বোন আমাদের এভাবে চলে যাবে কল্পনাও করতে পারছি না।

আতাউর রহমান আরও বলেন, একবোন মারা গেলেন, আবেক বোন স্বামীহারা হলেন। অন্যজন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। হঠাৎ এতবড় দুর্ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে চার পরিবার। এ শোক প্রকাশ করার ভাষা আমাদের জানা নেই।
নিহত জান্নাতুনের প্রতিবেশী ফেন্সি আক্তার বলেন, অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলেন জান্নাতুন। কারোর সঙ্গে দ্বন্দ্ব কলহ করতেন না। সবাইকে একইভাবে ভালবাসতেন। একই মেয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে এভাবে চলে যাবেন ভারতেও কষ্ট লাগছে।

নিহত মকবুল হোসেনের শ্যালক জাহিদ হাসান জানান, বোন রমিছা বেগমকে প্রায় ২৫ বছর আগে উপজেলা সদরের বিজলী গ্রামের মকবুল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বোনকে স্বামীহারা ও সন্তানকে এতিম করে দুলাভাই এভাবে চলে যাবে ভাবতে কষ্ট লাগছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বলিহার বাবলাতলি এলাকায় ট্রাকের চাপায় সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী চার শিক্ষকসহ নিহত হন পাঁচজন।

নিহতরা হলেন, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার পানিহারা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন (৪৮), বেলকাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মকবুল হোসেন (৫৮), রামকুড়া আশরাফুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক লেলিন সরকার (২৭), গুজিশহর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন ফেরদৌস (৩৫)।

একই সঙ্গে মারা যান সিএনজি চালক সেলিম রেজা (৪২)। গুরুতর আহত অবস্থায় শিক্ষক নুরজাহান বেগমকে (৩০) উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে