বদলগাছীতে অযত্নে-অবহেলায় হারিয়ে গেল পাখিদের অভয়াশ্রম

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২; সময়: ১২:৪৭ অপরাহ্ণ |
বদলগাছীতে অযত্নে-অবহেলায় হারিয়ে গেল পাখিদের অভয়াশ্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছীতে পাখিদের জন্য গড়ে তোলা ব্যতিক্রমী অভয়াশ্রম গুলি অযত্নে আর অবহেলায় মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই হারিয়ে গেল অন্ধকারে। তদারকি না থাকায় গাছ থেকে ভেঙে পড়েছে বাধাঁইকৃত মাটির হাড়ি পাতিল। নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাবে অভায়শ্রমে পাখিদের সংখ্যা দিন দিন কমছে বলে ধারনা করছে এলাকাবাসী।

জানাযায়, ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান এমনই এক ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে সেই সময় সাধুবাদ জানিয়েছিলেন এলাকাবাসী ও সচেতন মহল।

প্রকৃতিতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ সবারই মন কাড়ে। পাখিরা বিশেষ করে গাছে আশ্রয় নিয়ে থাকে। গাছেই তারা ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফুটায়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অর্থাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে গাছে আশ্রিত পাখিদেও অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। এসব দিকে বিবেচনা করে পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম গড়তে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক জেলা প্রশাসক।

সে উদ্যোগ অনুসারে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ও খাঁস জমির উপর সরকারি বড় বড় গাছগুলোতে হাঁড়ি-পাতিল বেঁধে দেওয়া হয়ে ছিলো। কিন্তু সঠিক তদারকি না থাকায় মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই এসব হাঁড়ি-পাতিল ভেঙে যায়। পাখিদের প্রয়োজনীয় খাদ্য না থাকায় পাখির সংখ্যাও দিন দিন অনেক কমে গেছে।

অভয়াশ্রমের বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের পাটনঘাটা গ্রামে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো একটি বটগাছ রয়েছে। এ গাছে এক সময় অনেক প্রজাতির পাখির আনাগোনা ছিলো। এসব দেখে উপজেলা থেকে বড় বড় বটগাছ গুলোতে পাখিদের জন্য একটি অভয়াশ্রম করতে গাছের ডালে ডালে গাছ ভেদে ৩০ থেকে ৫০টিরও বেশি মাটির হাঁড়ি-পাতিল বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

এসব হাঁড়ি-পাতিল নিরাপদ মনে করে বাসা বেঁধেছিল দোয়েল, ঘুঘু, বাবুই ও বুলবুলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও কাঠ বিড়ালী। কয়েক বছরের ব্যবধানে অনেক হাঁড়ি-পাতিল গাছ থেকে খসে পড়ে গেছে। এখন যে কয়েকটি গাছে হাঁড়ি-পাতিল আছে সেখানে পাখিরা বাস করে না।

বদলগাছীর পাটনঘাটা গ্রামের মুদি দোকানী জাহিদ বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে এই পুরনো বটগাছটিতে সাবেক নির্বাহী অফিসার মাসুম আলী বেগ ৪০টির মতো হাঁড়ি-পাতিল বেধে দিয়ে ছিলো । হাঁড়ি গুলোতে কয়েকটি শালিক পাখিকে বসবাস করতে দেখেছি। কিন্তু গাছের নিচের দিকে বাঁধা হাড়িতে পাখি বসতো না। এখন আর উপরের হাঁড়ি পাতিল নেই। নিচের দিকে লাগানো কিছু হাড়ি পাতিল গাছে আছে। তবে যে উদ্দেশ্যে এসব হাঁড়ি পাতিল বাঁধা হয়েছিল তা সফল হয়নি। কারণ তারপর থেকে কোন কর্মকর্তা এসব তদারকি করেনি।

বালুভড়া বাজারের ফল বিক্রেতা মিলু বলেন, বছর খানেক আগে বটগাছে মাটির হাড়ির পাত্র দেখেছিলাম। এখন হাতে গোনা কয়েকটি আছে। বাঁকিগুলো নাই। তবে কনো পাখি বাস করতে দেখিনি।

বদলগাছী উপজেলার বন কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, হাঁড়ি-পাতিল গাছে বেঁধে পাখিকে সংরক্ষণ করতে চাইলেও সেখানে পাখি থাকে না। বিশেষ করে দোয়েল ও শাকিল পাখি সেখানে বসবাস করে। তবে এসব পাখি বসবাসের জন্য এতো কিছুর প্রয়োজন নেই। এরা স্বাভাবিক ভাবে প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুকুন, টিয়া, চন্দনা সহ বিভিন্ন পাখি প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিলুপ্ত হওয়ার আগেই তাদের রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি মুনিরুজ্জামান বলেন, পাখিদের বসবাস ও প্রজননের জন্য জেলা প্রশাসকের উদ্দ্যেগে ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছে গাছে মাটির ছোট থালা ও হাঁড়ি-পাতিল বাঁধা হয়েছিল। তদারকি না থাকলে কৃত্রিমতাই কনো কিছুই স্থায়ী হয় না। গাছে যেসব পাতিল বাঁধা হয়েছিল ঝড়ে তা নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, পাখি সংরক্ষণের জন্য উপজেলার গ্রামে গ্রামে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। শুধুমাত্র পাখির ঘরবাড়ি করে পাখি রক্ষা সম্ভব না। বনায়ন করতে হবে। পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। তাদের বসবাস নিরাপদ হলেই প্রজনন সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। আমি আসার আগেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। তবে আমি অভয়াশ্রমের বিষয়টি দেখবো।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে