সংসার চালাতে বাড়ছে ঋণের বোঝা

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২; সময়: ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ |
সংসার চালাতে বাড়ছে ঋণের বোঝা

ইসমত আরা ও তারজাউন ববি : বাজারে আগুন, মেজাজ চড়েছে টঙে/ আগুন ছড়াল সূর্যাস্তের রঙে/ হল্কা থামাতে আজ নানা ছলেবলে/ জ্যোাৎস্না ঢালল সন্ধ্যের দমকলে/ চাঁদ ও চকোরে চুপি চুপি হল কথা/ ভুলে যেতে হবে কঠোর বাস্তবতা। কবিতার কথাগুলোর মতো এখন এমনই আমাদের জীবন সংগ্রাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পদতলে জনজীবন পিষ্ট। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে চাহিদা মেটাতে মানুষের নাভিশ্বাস।

বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। আয়ের চেয়ে ব্যয় দ্বিগুন। সংসারে বেড়ে যাচ্ছে ঋণের বোঝা। পরিবারকে সামলাতে না পারায় বাড়ছে হতাশা ও পারিবারিক অশান্তি।

দিনে দিনে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের দূরত্ব বাড়ছে। ব্যয়ের ছুটে চলা গতির কাছে সীমিত আয় নিয়ে পথ চলা মানুষগুলো অনেকটা ক্লান্ত। রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার মোল্লাপাড়ার দিনমজুর মুক্তার আলী। পরিবারের সদস্য ৬ জন। মুক্তার আলীর স্ত্রী সাগরা (৪০), প্রতিবন্ধী মেয়ে রুরিনা (১৫), তাদের ছেলে পিয়াস (২৫), পিয়াসের স্ত্রী মিম (২০), পিয়াসের মেয়ে ইয়াসমিন (৪)। এই ৬ জনের পরিবারের একমাত্র তিনি উপার্জনকারী।

মুক্তার আলী নিজেই দিলেন তার আয় ও ব্যয়ের হিসাব। তিনি বলেন, আমি দিনমুজুর। গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে কাজ করতে হয়। প্রতিদিন মজুরি পাই ৪০০ টাকা। যাতায়াতসহ অন্য খরচ বাদে প্রতিদিন বাড়ি নিয়ে আসা হয় ৩০০ টাকা। প্রতি মাসে প্রায় ৯ হাজার টাকা আয় হয়। এই সীমিত টাকায় সংসার চালানোই দায়।

ব্যয়ের হিসেব দিতে গিয়ে মুক্তার আলী বলেন, সংসারে প্রতিদিন ০২ কেজি চাল লাগে। সেই হিসেবে মাসে চাল লাগে ৬০ কেজি। যা কিনতে ০৩ হাজার টাকা লাগে, খড়ি ৫ মণ (এক হাজার টাকা), তেল ৩ কেজি (৭৮০ টাকা), ওষুধ (এক হাজার ৫০০ টাকা) মসলা ও সবজি মিলে এক হাজার ৫০০ টাকা। মোট ব্যয় ৭ হাজার ৭৮০ টাকা।

মুক্তার আলী জানান, এখানেই তার ব্যয় শেষ নয়। নানান কারণে সংসারে ঋণ আছে। যা মাসে কিস্তি টানতে হয় ১০ হাজার টাকা। কিস্তি ও সাংসারিক খরচসহ তার মোট ব্যয় ১৭ হাজার ৭৮০ টাকা। প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ০৮ হাজার ৭৮০ টাকা।

মুক্তার আলীর স্ত্রী সাগরা বলেন, ‘আমাদের সংসারে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। আমার বড় ছেলে পিয়াসও ঠিক মতো আয় করে না। এতে আমার স্বামীর উপরে চাপ বাড়ে। মেয়ে রুবিনা প্রতিবন্ধী। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না, মেয়েটা আমার নিজে চলাচলও করতে পারে না। মা হয়েও আমি কিছুই করতে পারছি না।’ কথাটা বলতে বলতে আঁচল দিয়ে চোখ মুছলেন সাগরা।

জীবনে শান্তি কে না চায়, কিন্তু তা চাইলেই যে কাছে আসবে তা তো না। আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় দরিদ্র মানুষের জীবন হয়ে উঠছে মাছের কাঁটার মতো। মাছের কাঁটা যেমন গলায় বাধলে নামানো কঠিন। সংসারের ব্যয় এখন তেমনই। দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। বর্তমান সময়ে অশান্তিতে পুড়ছে অনেকেই।

রাজশাহী মহানগরীর শাহ মখদুম থানা এলাকার জেলার শিল্পীপাড়ায় আসলাম আলী (৪৫)। শহরের মধ্যে একটি খড়ির আড়তে কাজ করেন। পরিবারে তার চার সদস্য। স্ত্রী পিয়ারী বেগম (৩০), ছেলে ইয়াসিন (৯) ও সাবিদ (৫)।

আসলাম আলী বলেন, গাছ কেটে খড়ি করা অনেক পরিশ্রমের কাজ। তার উপরে আমার যহ্মা রোগ আছে। এমন অসুখ নিয়ে সারাদিনে ৩০০ টাকার বেশি আয় করতে পারি না। প্রতিদিন কাজ হয় না। সব মিলিয়ে মাসে ০৬ হাজার এর বেশি আয় হয় না।

তিনি বলেন, পরিবারের ব্যয় বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। সংসারে ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অভাব বাড়ায় বাচ্চাদের পড়াশোনা করাতে কষ্ট হচ্ছে।

আসলাম আলী জানান, তার প্রতি মাসে ঘর ভাড়া ০২ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৫০০ টাকা, মাসে চাল এক হাজার ৮০০ টাকা (৩০ কেজি), মাসে তেল ৯৫০ টাকা, মাছ/মাংস, তরকারি ও মসলা মিলে ০৩ হাজার ৫০০ টাকা, ওষুধ ০২ হাজার টাকা, বাচ্চাদের পড়াশোনা খরচ ০১ হাজার টাকা। সব মিলেয়ে মোট ব্যয় হয় ১২ হাজার ৫৫০ টাকা। প্রতি মাসে তার ঘাটতি থাকে ০৬ হাজার ৫৫০ টাকা।

মুক্তার আলী ও আসলাম আলী জানান, এই ভাবে জীবন চালানো অনেক কষ্টদায়ক। মানসিকভাবে শান্তি পাচ্ছেন না।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে