গুরুদাসপুরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি মাছ ধরার চাঁই সামগ্রী বিক্রি

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২; সময়: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ |
গুরুদাসপুরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি মাছ ধরার চাঁই সামগ্রী বিক্রি

এস,এম ইসাহক আলী রাজু, গুরুদাসপুর : নাটোরের গুরুদাসপুরে জমে উঠেছে মাছ মারার চাঁই (খোলসুন), বিত্তি, ভারই, ধুন্দি, বানা, খাদন ও খালই এর হাট। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরায় ব্যবহার হয় এইসব ফাঁদ। পৌর শহরের চাঁচকৈড় হাটে বসে চাঁইয়ের বড় মোকাম। সপ্তাহের দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার এই হাট বসে।

গুরুদাসপুর উপজেলা ছাড়াও আশপাশের বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও পাবনার চাটমোহর থেকে চাঁই বিক্রি করতে আসেন অনেকে। চলনবিল এলাকা ছাড়াও ঢাকা, মানিকগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট এলাকার পাইকার ও জেলেরা গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় হাটে এসে চাঁই কিনে নিয়ে যান।

জানা গেছে, চলনবিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ ধরার কাজে ব্যবহার হয় চাঁই। আর এটি বুনে বিকল্প আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন কারিগরেরা। এই আয় থেকেই গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ৬ হাজার পরিবারের অভাব দূর হচ্ছে।

চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সবাই কমবেশি দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। জমিজমা নেই। বছরের একটা সময় হাতে কাজ থাকে না তাঁদের। বিকল্প আয় হিসেবে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরির আয় দিয়ে তাদের সংসার চলে। এ ছাড়া এই কাজে পুঁজিও লাগে কম।

গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের দাদুয়া গ্রামের মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চাঁই বানাতে বাঁশ আর তালগাছের ডাগুরের শাঁস ও নাইলন সুতা লাগে। দিনে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়টি মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই তৈরি করতে পারেন তাঁরা। তবে সংসারে যাঁদের সদস্য বেশি, তাঁরা ১০-১৫টি চাঁই তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি চাঁই তৈরিতে ১০০ থেকে ১৬০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করেন ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা করে। খরচ বাদে লাভ হয় ভালো।

ওই ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের হান্নান আলী বলেন, ‘আমরা বর্ষার শুরুতে চাঁই বানানো শুরু করি। এখন দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে বর্ষার পানি আসছে। মাছ ধরা শুরু হয়ে গেছে। আমরা চাঁই তৈরি করে ভালো দাম পাচ্ছি। এবার সবকিছুর দাম বেশি। সেই তুলনায় চাঁইয়ের দাম তেমন একটা বাড়েনি। তবে হাটে যে দাম পাচ্ছি আমরা তাতে খুশি। প্রতিদিন ১০-১২টা চাঁই তৈরি করি। সেই চাঁইগুলো প্রতি শনি ও মঙ্গলবার চাঁচকৈড় হাটে বিক্রি করি।

শনিবার গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে, এক জোড়া চাঁই (খোলসুন) আকার ভেদে ৪৫০ থেকে ৫৫০, বিত্তি ৩৫০, ভারই ৩০০, ধুন্দি ২৫০, বানা ৪০০, খাদন ৪৫০ ও খালই ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ থেকে চাঁচকৈড় হাটে আসা পাইকার ছাবেদ মিয়া বলেন, প্রতি হাটে তিনি প্রায় ১ লাখ টাকার চাঁই, বানা ইত্যাদি মাছ ধরার সামগ্রী কিনে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এতে তাঁর খরচ বাদে প্রতি হাটে ৩০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।

সিলেটের পাইকার হারুন হাফিজ বলেন, চাঁচকৈড় হাট থেকে তিনি এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার চাঁই কেনেন। সেগুলো সিলেটসহ পাশের জেলাগুলোতে বিক্রি করেন তিনি।

গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় চাঁই হাটের ইজারাদার মুক্তার হোসেন বলেন, বর্তমানে এই হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি মাছ ধরার সামগ্রী বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা এসে চাঁচকৈড় হাট থেকে চাঁইসহ মাছ ধরার ফাঁদ কিনে নিয়ে যান।

ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন বলেন, ধারাবারিষা ইউনিয়ন এলাকায় আট হাজারের বেশি মানুষ বাণিজ্যিক ভাবে চাঁই বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

তাঁদের দেখাদেখি চলনবিল কেন্দ্রিক অন্য উপজেলায়ও কমবেশি চাঁই তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে