জলদস্যু সর্দার থেকে জনপ্রতিনিধি

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২; সময়: ১২:৩২ অপরাহ্ণ |
জলদস্যু সর্দার থেকে জনপ্রতিনিধি

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাঁশখালীর আবদুল হাকিমের জীবনে নতুন বাঁক নিয়েছে। জলদস্যু সর্দার ছিলেন তিনি। বাইশ্যা নামে কুখ্যাত ছিলেন। তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে ৪২ জেলেকে খুন করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল। ১৯ মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।

জেল থেকে বের হয়ে চাকরি নেন পাহারাদারের। দাড়ি রেখেছেন। মোয়াজ্জিনের আজানের সঙ্গে হাজির হন মসজিদে। তাঁর এমন পরিবর্তনে আস্থা রেখেছেন এলাকার মানুষও। দু’দিন আগে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) নির্বাচিত হয়েছেন।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর পঞ্চাশ বছর বয়সী আবদুল হাকিমের বললেন, ‘এতকাল মানুষকে কষ্ট দিয়েছি। বাকি জীবন মানুষের সেবায় কাটাতে চাই।’

গত ১৫ জুন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে লড়েন আবদুল হাকিম। সিলিং ফ্যান প্রতীক নিয়ে ৫৩৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। এই ওয়ার্ডে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ৯ জন।

র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এ ইউসুফ বলেন, তিনি দুর্ধর্ষ জলদস্যু সর্দার ছিলেন। র‌্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে ফিরেছেন। মানুষের আস্থা অর্জন করে এখন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আমাদের জন্যও আনন্দের খবর। এখনও যারা অন্ধকার পথে আছে তাদের প্রতিও আহ্বান থাকবে তারা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

বাঁশখালী ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রাম। এই গ্রামেই ছিল জলদস্যু সর্দার বাইশ্যার বাস। শুধু বাইশ্যা নন, এই গ্রামে বাস ছিল জলদস্যু রানী রহিমাসহ ৫৬ ডাকাতের! অলিখিতভাবে ‘ডাকাতপাড়ার’ তকমা থাকলেও সেই বদনাম এখন ঘুচছে। কমে এসেছে স্থলে ডাকাতি, সাগরে জলদস্যুতা ও অপহরণের ঘটনা।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ বাইশ্যা ডাকাতের বাহিনীর সদস্যরা কুতুবদিয়া থানার জাহাজখালী এলাকায় গভীর সমুদ্রে ৩১ জেলে ও এর আগে ১১ জেলেকে নির্মমভাবে খুন করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দেয়। তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কোস্টগার্ডের সোর্স সফি আলমকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে।

হত্যা, ডাকাতি ও অপহরণের অভিযোগে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১১টি মামলা ছিল। কয়েক দফা গ্রেপ্তার হয়ে জেলেও যান। কিন্তু ফিরে এসে আবারও ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন তাঁর বাহিনীর সদস্যরা।

চার মেয়ে ও চার ছেলের জনক আবদুল হাকিম। বড় ছেলে সমুদ্রে মাছ ধরেন। ছোট ছেলেকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দিয়েছেন। ২০২০ সালে আত্মসমর্পণের পর বছর খানেক ছিলেন কারাগারে।

ফিরে এসে ছেলের সঙ্গে সমুদ্রের মাছ ধরার কাজ দেখাশোনা করতেন। কয়েক মাস আগে ছনুয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কার প্রকল্পে পাহারাদার হিসেবে কাজ নেন।

গতকাল ফোনে আবদুল হাকিম বলেন, ‘অন্ধকারের পথে ছিলাম। আত্মসমর্পণের পর জেলে গিয়ে মনস্থ করেছিলাম, এতকাল মানুষকে কষ্ট দিয়েছি। বাকি জীবন মানুষের সেবায় কাটিয়ে দেবো। আল্লাহ আমার সে ইচ্ছা পূরণ করেছেন।

আমার এলাকার মানুষ আমার ওপর আস্থা রেখে মেম্বার নির্বাচিত করছেন। কাজের মাধ্যমে আমি মানুষের আস্থার প্রতিদান দেবো। আমার এলাকায় কোনো ধরনের অপকর্ম চলবে না। সব অন্যায় অবিচার বন্ধ করা হবে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে