গম পেতে ভারতের শর্ত মেনে নিয়েছে আমিরাত

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২; সময়: ৩:৩৯ অপরাহ্ণ |
গম পেতে ভারতের শর্ত মেনে নিয়েছে আমিরাত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা আগামী চার মাস ভারত থেকে কেনা গম অন্য কারও কাছে বিক্রি করবে না।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা ১৩ মে থেকে কার্যকর হবে এবং এটি গম, ভারতীয় গম থেকে তৈরি আটা এবং এ সংক্রান্ত সমস্ত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত তার সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসাবে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেছে। তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত চায় না দুবাই বা আবুধাবি তাদের পাঠানো গম অন্য দেশে দেওয়া হোক।

প্রতিবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ভারত চায় না যে তারা দুবাই বা আবুধাবিতে যে শস্য বা গম রপ্তানি করছে, তা অন্য কোনো দেশে দেওয়া হোক। ভারত চায় এটা কেবল আমিরাতেই থাকুক এবং সেখানে অবস্থানরত ভারতীয় শ্রমিকরাও যেন এর সুবিধা নিতে পারে।

ভারত ১৪ মে ঘোষণা করেছিল যে, তারা গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করছে। তবে যেসব দেশ খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখা হবে বলেও জানানো হয়।

এছাড়া ইতোমধ্যে চুক্তিবদ্ধ রপ্তানির ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না। এছাড়াও, ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে, কিছু শর্ত সাপেক্ষে রপ্তানি চলবে বলেও জানানো হয়।

ভারত সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, অভ্যন্তরীণ বাজারে গমের ক্রমবর্ধমান দামের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি।

আমিরাতের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ কী?

আমিরাতের ওয়েবসাইট দ্য ন্যাশনাল নিউজ বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে বলছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভারতের সাথে দৃঢ় কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি রয়েছে।

মতিলাল ওসওয়াল সিকিউরিটিজ কোম্পানির পরিচালক কিশোর নার্নে দ্য ন্যাশনালকে বলেন, ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাতকে একটি বিশেষ অংশীদার হিসাবে বিবেচনা করে। উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক বেশি শক্তিশালী, সেই কারণেই সরকার এই বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে একটি সাধারণ ঐকমত্য রয়েছে যে, যদি গম বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করা হয়, তবে ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাতে গম রপ্তানি চালিয়ে যাবে। মজবুত কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকায় আমিরাতের মতো বাংলাদেশেও গম রপ্তানি বন্ধ করছে না ভারত।

ভারত আমিরাতকে কত গম দেয়

ভারত ২০২১-২২ অর্থবছরে আমিরাতে ৪.৭১ লাখ টন গম রপ্তানি করেছে। এর দাম ১৩ হাজার ৬৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর ভারত যে খাদ্যশস্য রপ্তানি করেছে, তার সাড়ে ৬ শতাংশ আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে।

ভারত যে পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি করে তার তুলনায় এটা খুব বেশি না হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য এ পরিমাণ অনেক বেশি। মার্কিন কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত বছরে দেড় মিলিয়ন টন গম ব্যবহার করে এবং এর পুরোটাই আমদানি করে।

আমিরাত তার মোট আমদানি করা গমের ৫০ শতাংশ নেয় রাশিয়া থেকে। রাশিয়া ছাড়াও কানাডা, ইউক্রেন ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও গম আমদানি করতো আমিরাত। তবে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে আরব আমিরাতের জন্য একটি বড় রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে ভারত।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি-রপ্তানির এই হিসাব-নিকাশে অনেক বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। তবে জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়া ও ইউক্রেনের গম আসায় সরবরাহের উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কী আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিবৃতিতে

সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে যে, আন্তর্জাতিকভাবে যা কিছু ঘটছে তা ব্যবসাকে প্রভাবিত করেছে এবং সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ভারতের সাথে তার শক্তিশালী এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

মন্ত্রণালয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেছে, যেসব কোম্পানি ১৩ মে’র আগে দেশের বাইরে আমদানি করা গম বিক্রি করতে চায়, তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে হবে এবং এর জন্য অনুমোদন নিতে হবে।

ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ৩৫ লাখ ভারতীয় পাসপোর্টধারী এখানে বসবাস করেন।সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনসংখ্যার ৩৫% ভারতীয়, যা অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের চেয়ে বেশি।

করোনা ভাইরাস যখন চরমে, তখন ভারত বিমানযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করেছিল।

সেই সময়ে, চীনের সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়েছিল এবং ডাল, চিনি, শাকসবজি, চা, মাংস এবং সামুদ্রিক খাবারসহ অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতির মধ্যে ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিকারক হিসাবে আবির্ভূত হয়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ২১ জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে একটি বড় অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রী নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান একটি অনুষ্ঠানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় সুধীরের সাথে মতবিনিময় করবেন।

বিখ্যাত শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় যোগব্যায়ামও করা হবে। এ আয়োজনে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের পরে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক, তবে উচ্চ অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের কারণে রপ্তানি হয় কম। ভারত গত বছর প্রায় ১০৮ মিলিয়ন টন গম উৎপাদন করেছিল, তবে এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছিল ৭০ লাখ টন।

প্রচণ্ড গরমে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত

উত্তর ভারতে গম চাষ বেশি হয়। মধ্য ভারতে, মধ্যপ্রদেশেও প্রচুর উৎপাদন হয়।

বেশিরভাগ এলাকায় শুধুমাত্র মার্চ ও এপ্রিল মাসে গম কাটা হয়।

এ বছর উত্তর ভারতে মার্চ ও এপ্রিল মাসে রেকর্ড গরম হয়েছে। যার কারণে গমের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মার্চ পর্যন্ত গমের জন্য ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মার্চ মাসে উত্তর ভারতের অনেক এলাকায় তাপমাত্রার পারদ এর অনেক ওপরে ছিল।

সরকারি নথিতে বলা হচ্ছে, এ বছর গমের ফলন প্রায় ৫ শতাংশ কম।

আরব আমিরাত ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও হতে যাচ্ছে। ইসরায়েল, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার আইটুইউটু জোট ঘোষণা করেছে। বাণিজ্য ও নিরাপত্তার জন্য এই জোটের অধীনে চারটি দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে