মাঙ্কিপক্সে আফ্রিকায় ৬৬ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২; সময়: ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ |
মাঙ্কিপক্সে আফ্রিকায় ৬৬ জনের মৃত্যু

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ২০২২ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৯৭ জন।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আফ্রিকা মহাদেশের শীর্ষ স্বাস্থ্য সংস্থা আফ্রিকা সেন্টারস ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (আফ্রিকা সিডিসি) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আহমেদ অগওয়েল ওউমা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেছেন, এ রোগের বিস্তার রোধে যদি বিশ্বজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ও মৃত্যুর অনুপাতে আফ্রিকা থেকেই এই কর্মসূচি শুরু করা উচিত।

বৃহস্পতিবার ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকা সিডিসির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওউমা জানান, ২০২২ সালের শুরু থেকে মহাদেশের যেসব দেশে এই রোগে মৃত্যু ও আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, সেসব হলো, ক্যামেরুন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ডেমেক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, নাইজেরিয়া, মরক্কো, ঘানা, লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিওন।

সংবাদ সম্মেলনে আফ্রিকা সিডিসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বলেন, আমাদের বক্তব্য হলো, মাঙ্কিপক্সের বিস্তার রোধে টিকাদান কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ এবং যদি বিশ্বজুড়ে টিকাদান শুরু হয়, সেক্ষেত্রে আফ্রিকা থেকেই এই কর্মসূচি শুরু হওয়া উচিত। কারণ এখানে চাপ বেশি, ঝুঁকি উচ্চ এবং এই রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য উপযুক্ত শর্তও বিদ্যমান।

মাঙ্কিপক্স এক প্রকার বিরল ও স্বল্প পরিচিত ভাইরাসজনিত অসুখ। স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির একটি ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। ভাইরাসটির দুইটি রূপান্তরিত ধরন রয়েছে মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান।

বিশেষজ্ঞদের মতে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আদ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার।তার পর একসময় মানবদেহেও সংক্রমিত হওয়া শুরু করে মাঙ্কিপক্স।

মাঙ্কিপক্সে তেমন গুরুতর উপসর্গ খুব একটা দেখা যায় না। এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে- জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট এবং মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দেহে অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে।

পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। গুটি বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়।

এ রোগে বিরল কিছু ক্ষেত্রেই কেবল মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। পশ্চিম আফ্রিকার একটি ধরনে মৃত্যুহার ১ শতাংশ। এটি যুক্তরাজ্যে ছড়িয়েছে। তবে কঙ্গো অঞ্চলের একটি ধরনের মৃত্যুহার ১০ শতাংশ।

মাঙ্কিপক্স, গুটিবসন্ত এবং ভ্যাক্সিনিয়া এগুলো সবই একই গ্রুপের ভাইরাস। সফলভাবে গুটিবসন্তের টিকাদানের ফলে ১৯৮০ সালে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়েছে। গুটিবসন্তের টিকাও মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা দেয়।

গুটিবসন্তের প্রথম প্রজন্মের ভ্যাকসিন আর নেই, তবে ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাসের ওপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। যা গুটিবসন্ত এবং মাঙ্কিপক্স দুটির বিরুদ্ধেই কার্যকর। এছাড়া বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে বলে দেখা গেছে।

১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১ দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পর নাইজেরিয়ায় চলতি সবচেয়ে বেশি এ রোগের প্রকোপ দেখা গেছে।

গত ৭ মে প্রথম একজন ইউরোপীয়ের দেহে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়া থেকে ওই ব্যক্তি ইংল্যান্ডে ফিরে এসেছিলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মের পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩০টি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে হাজার। তবে এ পর্যন্ত এসব দেশে মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে