গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে মাদক পাচার করতো শাহানুর

প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০২২; সময়: ৩:৩১ অপরাহ্ণ |
গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালে মাদক পাচার করতো শাহানুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, আদমদীঘি : বেশভূষায় একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। এলাকাবাসী তাকে সমীহ করতেন। কিন্তু সেই তিনিই বিস্কুটের প্যাকেটে করতেন হেরোইন পাচার। গার্মেন্টস ব্যবসা আর ধর্মীয় লেবাস ছিল তার মাদক ব্যবসার মূল হাতিয়ার। হেরোইনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর হতবাক সবাই। সেই গ্রেপ্তারকৃত মাদক কারবারি বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর শহরের ঢাকাপট্টি মহল্লার বাসিন্দা শাহানুর ইসলাম (৫৮)। তার বাবা মৃত আইয়ুব আলী সান্তাহারে রেলওয়ের (ডিআইবি পদে) চাকরী করতেন।

বুধবার দুপুরে সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বাবার চাকরী সুবাদে স্বাধীনতার পর নওগাঁর হাপানিয়া থেকে সান্তাহারে বসবাস শুরু করেন শাহানুর ইসলাম। তিনি ছাত্র জীবনে সান্তাহার সরকারি কলেজ জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভালো একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেলেও করেননি। এরপর তিনি ভারত থেকে শাড়ীসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় নিয়ে এসে এলাকায় বিক্রি করতেন। রেল পুলিশ কঠোর হওয়ার পর সেই ব্যবসা ছেড়ে শুরু করেন সান্তাহার রেলগেট এলাকায় পুরাতন কাপড়ের ব্যবসা। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি সেই ব্যবসা করেছেন। তবে গত তিন বছর যাবৎ বাড়ি সংলগ্ন একটি জ্যাকেট তৈরির কারখানা গড়েন। সেখানে প্রায় ৫-৭ জন কারিগর কাজ করেন। গার্মেন্টসের এই ব্যবসা আর মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ায় এলাকাবাসী তাকে সমীহ করতেন।

গ্রেপ্তারকৃতের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের সাথে। তিনি জানান, আমার স্বামী এমন কাজ করতো আমরা বিষয়টি জানতাম না। ঢাকায় যেত মালামাল নিতে। কিন্তু বগুড়া থেকে এই ব্যবসা করতো বলে এখন জানলাম। তিনি কার প্ররোচনায় পড়ে এসব করতো আমাদের জানা নেই। এমন ঘটনায় আমাদের মানসম্মান শেষ।

স্থানিয় কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা একসাথে ব্যবসা করতাম। এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত এটা আমরা বুঝতে পারিনি। আমরা তাকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানতাম।

গত সোমবার (১৩ জুন) রাতে ঢাকা শাহাবাগ থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানাযায়, বগুড়া থেকে বাসযোগে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নেমে গন্তব্যে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাসটিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পূর্ব গেটের জরিপ শাহ্ মাজার এলাকা থেকে মাদক কারবারী শাহানুর ইসলামকে হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর তার ৩-৪জন সহযোগী পালিয়ে গেলেও ২২০ গ্রাম হেরোইনসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শাহানুর।

পুলিশকে শাহানুরের দেয়া প্রাথমিক তথ্যে জানাযায়, গত বছর আমের মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম এনে রাজধানীতে বিক্রি শুরু করেন। এতে তার বেশ লোকসান হয়। সেই আমের ব্যবসায়ীরাই তাকে হেরোইন সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। পরে সেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে হেরোইন নিয়ে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতেন। গ্রেপ্তারকৃত শাহানুরের ডায়াবেটিকস আছে। সে কারণে ব্যাগে ইনসুলিন রাখতো। সঙ্গে থাকতো বিস্কুটের একাধিক প্যাকেট। এসব প্যাকেটেই মাদক বহন করতেন তিনি।

সান্তাহার পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম জানান, আমাদের কাছে তার আগের কোনো মাদক মামলার তথ্য নেই। তার নাম ঠিকানা রেখেছি যদি তদন্ত আসে তখন বিস্তারিত জানাযাবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে