গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফায়ারম্যান গাউছুল আজম

প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২২; সময়: ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ |
গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ফায়ারম্যান গাউছুল আজম

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ফায়ারম্যান গাউসুল আজমের (২৪) দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

রোববার (১২ জুন) রাত ১২টায় যশোরের মনিরামপুরের খাটুয়াডাঙায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

রোববার ভোরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর খবর শুনে তার গ্রামের বাড়িতে শুরু হয় স্বজনদের আহাজারি। গাউছুলের একমাত্র পুত্রসন্তান ছয় মাস বয়সী সিয়াম জানে না, সে তার বাবাকে হারিয়েছে।

রোববার বিকেল ৩টায় ঢাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরে গাউসুলকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।এরপর প্রথম জানাজা শেষে স্বজনরা মরদেহ নিয়ে রওনা হয় গ্রামের বাড়ি যশোরের পথে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানে গাউসুলের মরদেহ গ্রামের বাড়ি মনিরামপুরের খাটুয়াডাঙায় পৌঁছায়।

এরপর গাউছুলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় খাটুয়াডাঙা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। যেখানে জড়িয়ে আছে মনিরামপুরের কৃতি সন্তান গাউছুলের শৈশবের স্কুলজীবনের স্মৃতি। সেই স্কুল মাঠেই ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় ও যশোর জেলার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার।

ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিরা। এরপর কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে রাত সাড়ে ১১টায় পড়ানো হয় গাউসুলের শেষ জানাজা। জানাজা শেষে গাউসুলের মরদেহ পুনরায় নিয়ে যাওয়া হয় বাড়িতে। সেখানে রাত ১২টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্বামীর অকাল মৃত্যুতে নির্বাক স্ত্রী কাকলী। বিলাপ করতে করতে মা আছিয়া বেগম অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আর বাবার বিরামহীন কান্নায় ভারী হয়ে গেছে গোটা পরিবেশ।

গাউসুলের দাদা আব্দুস সামাদ জানান, ভোর সাড়ে ৩টার দিকে তারা জানতে পারেন, তার নাতি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

নিহতের চাচা আকবর আলী বলেন, গাউসুল দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। অপরকে বাঁচাতে গিয়ে সে নিজেই চলে গেল না ফেরার দেশে। গাউছুলের ছোট্ট ছেলেটিকে যেন মানুষের মতো মানুষ করতে পারেন, সেজন্য সরকারের কাছে সহোযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

মনিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, নিহত গাউসুলের পরিবারের পাশে থেকে পিতৃহারা শিশু সিয়ামকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি সার্বিক সহোযোগিতা করে যাব।

খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের বাবা আজগর আলী ও মা আছিয়া বেগমের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে গাউসুল ছোট। তিনি ২০১৬ সালে খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১৮ সালে তিনি ফায়ারম্যান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন।

এরপর একই ইউনিয়নের দুর্বাডাঙ্গা গ্রামের কাকলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। গাউসুলের বর্তমান কর্মস্থল ছিল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থানা। কিন্তু ছয় মাসের ডেপুটেশনে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ছুটে যান গাউসুলসহ তার সহকর্মীরা। সেখানেই তার গাড়িতে আগুন ধরে যায়।

এতে তার সহকর্মীরা মারা গেলেও তিনি গুরুতর আহত হন। রাতেই তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। রোববার (১২ জুন) ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে