৫১ বছরেও মেলেনি পিরুয়া উরাও এর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২; সময়: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ |
৫১ বছরেও মেলেনি পিরুয়া উরাও এর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

তোফাজ্জল হোসেন, নিয়ামতপুর : কাজের স্বীকৃতি কে না চায়। তবে মুক্তিযোদ্ধারা শুরুতে এই স্বীকৃতিতে বেশি একটা আগ্রহ দেখাননি। তারপরও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে স্বীকৃতি দিয়ে চিঠি দিয়েছেন করেছেন সহযোগিতা।

তারপরও অনেকে বাদ পড়েছেন। কেউ আবার বেখেয়ালে আবেদনও করেননি। অনেকে আবেদন করে বিফল হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসে নওগাঁর নিয়ামতপুরের হাজিনগর ইউনিয়নের বাঐচন্ডি গ্রামের মৃত- জেনা উরাও এর ছেলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা পিরুয়া উরাও এখনো পাননি স্বীকৃতি। এই গ্রামে তিনিই একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা।

পিরুয়া উরাও এর রণাঙ্গণের বীরত্বগাঁথা কথাগুলো আজও তাঁর সন্তানদের অশ্রুশিক্ত করে। বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করে ৫১ বছর পরেও এখনো পায়নি তাঁর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু। তার মেয়ে সুমী খালকো বাবার স্মৃতিচারণ করে এমন ক্ষোভের কথা জানান।

দীর্ঘদিন ধরে অনেক চেষ্টা তদবির করেও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ হয়নি। তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় তিনি বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে।

স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্মান না পাওয়ায় দুর্বিষ্য যন্ত্রণা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বীর মুক্তিযোদ্ধা।

পিরুয়া উরাও জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের বালুরঘাট অর্ন্তগত পতিরাম ইয়থ ক্যাম্পের ৭নং সেক্টরে প্রশিক্ষন নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিই। আমি সাপাহার উপজেলা ও পত্নীতলা উপজেলার আগ্রাদ্বিগুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। যুদ্ধে আমি গুলিবিদ্ধ হই।

তিনি আরও বলেন ‘যারা আমার সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিল তাদের অনেকই বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব পেলেও শুধু আমার কপালে জুটছে না রাষ্ট্রীয় স্বীর্কৃতি।’

নিজ গ্রামের মানুষসহ উপজেলার অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা পিরুয়া উরাওকে মুক্তিযোদ্ধা সম্বোধন করলেও কাগজে-কলমে তার স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীনতার ৫১ বছরেও। ১৯৩৭ সালে জন্ম গ্রহণকারী পিরুয়া উরাও আজ বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। ঝাঁপসা চোখে এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান।

জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভূক্ত হলেও পিরুয়া উরাও এর নাম মুক্তিযোদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টে লিপিবদ্ধ হয়নি। সবশেষে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে শেষ পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠলেও এখন পর্যন্ত সম্মানী ভাতা তিনি পাননি।

পিরুয়া উরাও মুক্তিযোদ্ধা সংক্রান্ত মুক্তিবার্তা, গেজেট, ভারতীয় সনদ, প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত সনদসহ সব কিছুই আছে।
পিরুয়া উরাও এর সুমী খালকো বলেন, সম্প্রতি ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেটে নিয়ামতপুর উপজেলার নতুন মুক্তিযোদ্ধা তালিকার ৩নং এ বাবা পিরুয়া উরাও এর নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। এখন যেনো সরকার তার বাবাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

তিনি কান্না বিজড়িত কন্ঠে আরো বলেন, আমার বাবার দুটো কিডনী কষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া আরো অনেক জটিল রোগে ভুগছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।

বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন আমার বাবাকে যেন সুচিকিৎসা করাতে পারি তার ব্যবস্থা করে দিবেন। আর জানিনা বাবা আর কতদিন বাঁচবেন, মৃত্যুর আগে যেন বাবা তার যোগ্য সম্মান পান তারও ব্যবস্থা করবেন।

পিরুয়া উরাও এর স্ত্রী বিদাশী কিসপট্টা জানান, আমার স্বামী দেশের জন্য মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু জীবন বাজি রেখে যোদ্ধ করলেও আজও তার স্বামীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেওয়া হয়নি। তার স্বামীর শেষ ইচ্ছে তিনি যেনো বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে মরতে পারেন।

পিরুয়া উরাও বর্তমানে জীর্ণসীর্ণ একটি বাড়ীতে ছেলে মেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। থাকেন বাবার বাড়ীতেই। ছেলে দিন মজুরের কাছ করে কোন রকমে সংসার চালান।
ছেলে মিঠন খালকোর চাওয়া তার বাবাকে যেন যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়। আর সরকারী সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আমাদের পরিবারকে বাঁচান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে