বাগমারায় অজ্ঞাত রোগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত দুই ভাই

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২; সময়: ১০:৪৫ অপরাহ্ণ |
বাগমারায় অজ্ঞাত রোগে পক্ষাঘাতগ্রস্ত দুই ভাই

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : বাইসাইকেলের বেলের শব্দে একসময় অনেক পাঠকের ঘুম ভাঙাতেন সাজেদুর রহমান সান্টু (৩৯)। এখন বেলও বাজে না, পাঠকের ঘরে খবরের কাগজও পৌঁছে দিতে পারেন না।

অথচ সাজেদুর সংবাদপত্র বিক্রির কাজ করে সংসার চালিয়েছেন। ছোট ভাই সেলিম রেজাকে রাজশাহী কলেজে পড়িয়েছেন। সেলিম যখন চাকরিতে যোগ দিয়ে সংসারের হাল ধরবেন, তখন তাঁর দশাও হয় সাজেদুরের মতো।

বয়স ৩০ অতিক্রম করার পরপরই দুই ভাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা ও স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। সাজেদুর-সেলিমের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার কোয়ালীপাড়া গ্রামে।

এরই মধ্যে দুই ভাইকে সুস্থ করতে জমি বিক্রি করেছেন স্বজনেরা। চিকিৎসা করিয়েও ফল মেলেনি; বরং জমি বিক্রি ও বর্তমানে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় কষ্টে দিনযাপন করছে দুই ভাইয়ের পরিবার।

সাজেদুর-সেলিম কী রোগে আক্রান্ত, তা জানাতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। দুই ভাইয়ের অবস্থার কথা মুঠোফোনে শুনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমজাদ হোসেন প্রামাণিক বলেন, এটা জিনগত সমস্যা হতে পারে। এর চিকিৎসাও জটিল।

সাজেদুর রহমান পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন ৯ বছর আগে ২০১৩ সালে। নিজের জমানো টাকা খরচ করে দেশে চিকিৎসার পর কোনো উন্নতি না হওয়ায় বাবা ও নানার জমি বিক্রি করে ভারতে যান উন্নত চিকিৎসার জন্য। তাতেও কোনো শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার। এই সময়ে ভরসা হয়ে ওঠেন সাজেদুরের ছোট ভাই সেলিম রেজা।

রাজশাহী কলেজে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন সেলিম। পড়াশোনা শেষে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হন। একই সময়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

কিন্তু সেলিমের ক্ষেত্রেও ভাগ্য সহায় হয়নি। চাকরিতে যোগদানের কয়েক দিন আগে ২০১৮ সালে তিনিও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কলেজের চাকরিতে যোগ দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাঁকে অযোগ্য হিসেবে আখ্যায়িত করে। এরপর পরিবারটি আরও সংকটে পড়ে।

সাজেদুর রহমানের পরিবারে আছেন মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী সন্তান। সাত সদস্যের পরিবার এখন কষ্টে দিনযাপন করছে। সম্প্রতি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, পরিবারের নারী সদস্যরা হাঁস-মুরগি পালন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

সাজেদুর-সেলিমের মা শাহানারা বেগম সন্তানদের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, দুই ছেলের বয়স ৩০ বছর পার হওয়ার পরেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। জমানো টাকা আর স্বামী ও বাবার কাছ থেকে পাওয়া জমি বিক্রি করেও লাভ হয়নি।

কথা বলতে গেলে সাজেদুর রহমানের বেশির ভাগ শব্দ অস্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিন বেলা পেট ভরে খেতেও পারছেন না। ছেলেদের লেখাপড়া নিয়েও চিন্তিত। পাশে থাকা সেলিম রেজা মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পেরে তখন শুধুই কাঁদছিলেন। সূত্র- প্রথম আলো

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে