যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে

প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২২; সময়: ৬:১৭ অপরাহ্ণ |
যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক ও কর আরোপ বা আগের চেয়ে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কারণে অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান।

এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘কোভিডের অভিঘাত কাটিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন।’ যেখানে মূল লক্ষ্য সক্ষমতার উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সঙ্গে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে, পাশাপাশি বৈদেশিক মূদ্রা সুরক্ষায় বিলাসবহুল পণ্যে আমদানি নিরুৎসাহিত করছে।

যেসবের পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার মধ্যে রয়েছে-

আমদানি করা পনির ও দই ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে বিদেশি পনির ও দইয়ের দাম বাড়তে পারে।

সিগারেটের নিম্নস্তরের দশ শলাকার দাম ৩৯ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে ও সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়তে পারে।

আমদানি করা তৈরি পোশাকে ৪৫ শতাংশ সস্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে বিদেশি পোশাকের দাম বাড়বে।

অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, অপরিশোধিত আলকতরা, বিদেশি পাখি, প্রিন্টিং প্লেট, ক্যাশ রেজিস্ট্রার ফ্যান মোটর, লাইটার, দুই স্ট্রোক ও ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের সিএনজি, কম্পিউটার প্রিন্টার ও টোনার, আমদানিকরা মোবাইল চার্জার, কার্বনডাই-অক্সাইড, আমদানি করা পেপার কাপ, প্লেট।

দাম বৃদ্ধি তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বিলাসবহুল গাড়ি। রিকন্ডিশন ও হাইব্রিড গাড়িতে ২০০০ সিসি থেকে ৪০০০ সিসিতে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বাজাটে আমদানি করা লিফটের ওপর আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বাড়বে বিদেশি লিফটের দাম।

বাজাটে আমদানিকৃত ২৫০ সিসির বেশি মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ককর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ২৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ ও টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত রয়েছে। ২৫০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেল আমদানিতে ফোর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০০ শতাংশ ও টু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ২৫০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত ল্যাপটপের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বাড়বে বিলাসীপণ্য ল্যাপটপের দাম। জানা গেছে, নতুন মূসক আরোপের কারণে ল্যাপটপ কম্পিউটার আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মোট করভার দাঁড়াবে ৩১ শতাংশ।

এছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা পানির ফিল্টারের ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগে বিদেশ থেকে আমদানি করা পানির ফিল্টারের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। তবে নতুন বাজেট কার্যকর হওয়ার পর থেকে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হবে।

বাজেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, পিপিই ও করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে আরটি-পিসিআর কিট উৎপাদন ও প্রস্তুত করার কাঁচামাল আমদানির ওপর বিদ্যমান শুল্ককর মওকুফের সুবিধা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব সুরক্ষা সামগ্রীর দাম বাড়বে।

ট্রেনের প্রথম শ্রেণি ও এসি টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কারণে ট্রেনের প্রথম শ্রেণির এসি টিকিটের ভাড়া বাড়বে।

প্রস্তাবিত বাজেটে হ্যান্ডসেট বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম বাড়বে। বর্তমানে স্মার্টফোন আমদানিতে প্রায় ৫৮ শতাংশ কর দিতে হয়। স্থানীয়ভাবে অ্যাসেম্বল ও তৈরি হ্যান্ডসেটের ওপর কর ৩ থেকে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়।

এছাড়া ফ্রিজ, আমদানিকৃত ক্যাবল ও মেডিটেশন সেবাপণ্যের দাম বাড়তে পারে।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে