উৎপাদন খরচ বাড়ায় সার সংকটের শঙ্কা

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২২; সময়: ১:৫৪ অপরাহ্ণ |
উৎপাদন খরচ বাড়ায় সার সংকটের শঙ্কা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দেশের সরকারি সার কারখানাগুলোতে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করেও ইউরিয়ার প্রত্যাশিত উৎপাদন হচ্ছে না। লোকসান গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার সার কারখানাকে।

এরই মধ্যে সার কারখানায় ব্যবহূত গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো ২৫৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানাগুলোর উৎপাদন খরচ বহু গুণে বাড়ার পাশাপাশি কৃষিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্নিষ্টরা।

তাঁরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সার আমদানিতে টান পড়েছে। তার ওপর নিজস্ব উৎপাদন ব্যাহত হলে দেশের কৃষিতে প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

গত রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সব পর্যায়ের গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সার কারখানার গ্যাসের দাম- ২৫৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগে ঘনমিটার গ্যাসের জন্য সার কারখানাগুলো ৪ টাকা ৪৫ পয়সা করে দিত। এখন দিতে হবে ১৬ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পরিচালক (উৎপাদন ও গবেষণা) মো. শাহীন কামাল বলেন, এটা নিয়ে নিশ্চয়ই সরকার বিবেচনা করছে বা আরও করবে। পেট্রোবাংলাও সরকারের, বিসিআইসিও সরকারের; অসুবিধা তো নেই। আমাদের জোর দাবি আছে উৎপাদন মূল্যে গ্যাস দেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, আগে গ্যাস যা ছিল, এখনও তা-ই লাগবে। শুধু খরচ বেড়ে যাবে। এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আমদানির সারে প্রতি টনের ক্রয়মূল্য ৬৫-৭০ হাজার টাকা পড়ছে। ১৪ হাজার টাকা বাদ দিল ৫২ হাজার টাকাই ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে।

নিজস্ব উৎপাদনে আগে গ্যাস পাওয়ায় সমস্যা ছিল। বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত দুই মাসে গ্যাস পাওয়ায় কোনো সমস্যা হয়নি। ভালো সহায়তা পাচ্ছি আমরা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের উপপ্রধান (কৃষি অর্থনীতিবিদ) শেখ বদিউল আলম বলেন, সরকারের এক পকেটের টাকা আরেক পকেটে ঢুকবে। গ্যাসের দাম বাড়াতে সরকারি সার সরবরাহে সমস্যা হবে না।

তবে সার উৎপাদন খরচ বাড়বে। বিসিআইসি যে উৎপাদন করে, তাতে কোনো ভর্তুকি দেওয়া হয় না। তাদের কাছ থেকে আমরা সার কিনি। তবে সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা হবে না।

তিনি জানান, এবার মোট ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা আছে। বিপরীতে বর্তমানে প্রায় সাত লাখ টন ইউরিয়া মজুত আছে। নিজস্ব উৎপাদন প্রায় ১০ লাখ টন, বাকি প্রায় ১৬ লাখ টন আমদানি করতে হয়।

গত ১৬ মে প্রায় ১০ লাখ টন ইউরিয়া সার আমদানির দরপত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। কোন দেশ থেকে এই সার আসবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে কোন দেশ থেকে আমদানি করতে পারবে, তা তাদের (আমদানিকারক) বিষয়।

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৬৯ লাখ টন রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি- এই চার ধরনের সার ব্যবহার হয় ৫৭ লাখ টন। সারের ৮০ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে এমওপি সারের বড় অংশ আসে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে।

ওই প্রধান চারটি সার কৃষকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে এবার ভর্তুকি দিতে হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

জিপসাম, জিঙ্ক সালফেট, অ্যামোনিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারে সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছে তা বিক্রি করেন। ফলে কৃষককেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে