বাজেটে বাড়ছে ঋণনির্ভরতা

প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২২; সময়: ১:৫৫ অপরাহ্ণ |
বাজেটে বাড়ছে ঋণনির্ভরতা

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা সাজিয়েছে অর্থ বিভাগ। এই বিপুল ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসবে ঋণ থেকে। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেট আরও বেশি ঋণনির্ভর হতে যাচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থ বিভাগের তৈরি করা এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন।

অর্থ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে বাজেটে সরকার ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে। বাকি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বা বাজেটের ৩৬ দশমিক ১৪ শতাংশ থাকবে ঘাটতি, যা মেটানো হবে ঋণ থেকে।

আগামী অর্থবছরে সরকার বিদেশ থেকে বেশি ঋণ নিতে চাচ্ছে। বিদেশ থেকে নিট ঋণ ধরা হয়েছে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৮ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা বেশি।

এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও ঋণ বাড়বে সরকারের। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

মোট খরচের মধ্যে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে পরিচালন কর্মকাণ্ডে। এর মধ্যে সুদ বাবদ ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আর মোট বাজেটের ৩৮ দশমিক ২৮ শতাংশ বা ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা খরচ হবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাকি টাকা বিভিন্ন কর্মসূচি, এডিপিবহির্ভূত বিভিন্ন প্রকল্প ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ছে ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরা হচ্ছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগ মনে করছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট সম্প্রসারণমূলক হওয়া উচিত। করোনার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেগুলো বাস্তবায়নে সম্প্রসারণমূলক বাজেট দরকার। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সামগ্রিক পণ্যবাজার ঊর্ধ্বমুখী।

ফলে আগামী বছর উন্নয়ন খরচসহ সার্বিক সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। এ জন্য মোট রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এই প্রথম দেশের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি ধরা হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে চায়।

এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে। আর এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

কর ছাড়া রাজস্ব ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সরকার মনে করছে, দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া এবং পদ্মা সেতু থেকে করবহির্ভূত রাজস্ব বাড়বে। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে আসবে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

সব রপ্তানি খাতের জন্য করপোরেট কর হচ্ছে ১২ শতাংশ :এদিকে, সরকার সব রপ্তানি খাতের জন্য করপোরেট কর কমিয়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। বর্তমানে এই হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া তৈরি পোশাকশিল্পের সাধারণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই হারে করপোরেট কর পরিশোধ করে।

আর যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্বীকৃতি (গ্রিন ফ্যাক্টরি) পেয়েছে, তারা পরিশোধ করে ১০ শতাংশ। এ খাতের এই হার অপরিবর্তিত থাকছে।

তবে করপোরেট করহার কমার এ সুবিধা পরিবহন সেবা, টেলিকমিউনিকেশন, ইন্টারনেট ও ইন্টারনেটভিত্তিক রপ্তানি শিল্প পাবে না। তবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর কমানোরও উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। আর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ আছে, আগামী অর্থবছরে সেটি রাখছে না সরকার।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে