বাদলগাছীতে স্কুল ভবন নির্মানে জমির মালিকের কাছে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২২; সময়: ৮:০৮ অপরাহ্ণ |
বাদলগাছীতে স্কুল ভবন নির্মানে জমির মালিকের কাছে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার জগৎনগর গ্রামে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে বাঁধা দেওয়ায় জমির মালিককে পুলিশ ও জেলের ভয় দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন তাঁকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে এই স্বাক্ষর নিয়েছেন। এঘটনায় বায়েজিদ নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত ২ জুন বিকেলে তিনি এ অভিযোগটি করেছেন।

লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, জগৎনগর মৌজার ২৫ ও ২৬ নম্বর হাল দাগে ৩ তিন একর ০৭ শতক জমির মধ্যে ১৪ শতক জমিতে জগৎনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের দলিল অনুযায়ী ৫০ নম্বর দাগে বিদ্যালয়ের আরও ৩৬ শতক ধানী জমি রয়েছে। ওই দাগের জমিটি বিদ্যালয় থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। ২৬ নম্বর দাগের অবশিষ্ট জমির মালিক আমি। আমাদের জমিতে স্কুলের নতুন একটি ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে আমরা বাধা দিয়েছিলাম। এরপর নওগাঁ আদালতে একটি মমলা দায়ের করেছি।

এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আমার বিরুদ্ধে বদলগাছী ইউএনওর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। গত ২ জুন ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন আমাকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে পাঠালে। ওইদিন বেলা ১১টায় জমির কাগজপত্র নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে গেলে জমির নথিপত্র না দেখে আমাকে পুলিশ ও জেলের ভয়ভিতি দেখিয়ে সাদা কাগজে জোড় করে স্বাক্ষর নেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৪ জুন ইং তারিখে সরেজমিন গেলে প্রধান শিক্ষক মোছাঃ পিয়ারা বেগম দুটি দলিল দেখায়ে বলেন, জগৎনগর কলকুটি ৯০ নং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে , মহাপরিচালক ,প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর , বাংলাদেশ ঢাকার দুটি দলিলে ২৪ শতক জমি রয়েছে। একটি দলিলে মোঃ মোজাহার আলী সরদার পিতা মৃতঃ বশরতুল্যা সরদার, আাদিসাং-গোপালপর ,উপজেলা-বদলগাছী ,জেলা-নওগাঁর দানপত্র দলিল নং ৭৯০৬ তাং ১৩/১১/১৯৯০ ইং। সেই দলিলে লেখা রয়েছে বরাবর নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলাধীন জগৎনগর কলকুটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে ,মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা।

দলিলদাতা মোঃ মোজাহার আলী সরদার পিতা মৃতঃ বশরতুল্যা সরদার, আদিসাং গোপালপুর ,উপজেলা বদলগাছী জেলা নওগাঁ। দলিলের ৩য় পাতায়, মেীজাঃ জগৎনগর নং ২৩। খং নং ২৬, সাবেক ৯ নং দাগে ১৪ শতাংশ এবং ৫০ নং দাগ ধানী ৩৬ শতক মোট ৫০ শতাংশ জমি জগৎনগর মাদ্রসার নামে দানপত্র দলিল করে দিয়েছেন এবং ইতিপুর্বে উক্ত তফশিলের ৫০ শতক জমি কাহারো নিকট দান বা বিক্রয় করেনি মর্মে দাতা মোঃ মোজাহার আলী সরদার দলিলে অঙ্গিকার করেন।

দুই নং দালিলে দেখাযায় ,বরাবর , নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলাধীন ০২ নং মথুরাপুর ইউনিয়নের জগৎনগর কলকুটি ৯০ নং সরকারী প্রাথমিক বিধ্যালয়ের পক্ষে , মহাপরিচালক,প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ,ঢাকা । দলিল দাতা মোছাঃ দেলোয়ারা বেগম, পিতা মৃত ইব্রাহিম আলী সরদার ,মাতা মৃত মালা বেগম, স্বামী মৃত মহাতাব আলী সাং গোপালপুর , ডাকঘর জাবারীপুরহাট ,উপজেলা বদলগাছী, জেলা নওগাঁর নিকট থেকে দলিল নং ১২৩৪ তারিখ ১৫/৩/ ২০২১ ইং তারিখে জগৎনগর মৌজার আর ,এস, জেএল নং ১০৪ আর,এস খতিয়ান নং ৯৫ ,আর ,এস ২৫ নং দাগে বাগানÑ১০১শতাংশ এবং আর,এস ২৬ নং দাগে ৩০৭ শতাংশ মোট ৪০৮ শতাংশের কাতে ১০ শতাংশ দানপত্র দলিল করে নেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ।

উল্লেখ্য মৃত বশরতুল্যার মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ইব্রাহিম আলী সরদার জগৎনগর মৌজার ৫.৬৪ শতাংশের কাতে ১.৪১ শতাংশ জমি তাঁর ছেলে মোঃ নজরুল ইসলামের নামে ১৯/০৩/৬৮ ইং তারিখে হেবাবিল এওয়াজ দলিল করে দেন। ফলে ইব্রাহিম আলী সরদারের কন্যা মোছাঃ দেলোয়ারা বেগম তার পৈত্রিক সম্পতি প্রাপ্তি থেকে তাঁর অধিকার হারিয়ে ফেলেন। পরে ২১/৩/২১ ইং তারিখে এস.এম নজরুল ইসলাম তাঁর ছেলে বায়েজিদ কে সম্পূর্ণ সম্পতি জেবার ঘোষনা মুলে রেজিষ্টি করে দেন। যাহার দলিল নং ১৩৪৬।

প্রধান শিক্ষক পিয়ারা বেগম বলেন, মোজাহার আলী সরদারের দেওয়া দানপত্র দলিলের ২য় পাতায় জগৎনগর মাদ্রাসার নামে দানপত্র করে দেওয়ার কথা লিপিবদ্ধ করা আছে,যাহা ভুল হয়েছে। মোজাহার আলী সরদার বা তার ওয়ারিশগনের নিকট থেকে ভুল সংশোধনী কেন করে নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষিকা পিয়ারা বেগম জানান, সে ২০১৮ সালে ঐ বিদ্যালয়ে যোগ দান করেন।

অভিযোগকারী জানান, জগৎনগর মৌজার আর,এস, ৯৫ নং খতিয়ান ভুক্ত আর,এস, ২৬ নং দাগে ভিটা ৩.০৭ শতাংশের কাতে ১০ শতাংশ জমি পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত হয়ে সে শান্তিপুর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছে। কিন্তÍ উক্ত ১০ শতক জমিতে জগৎনগর কলকুটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ পিয়ারা বেগম সহ আরো কিছু লোক তার জমিতে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ করতে এলে আমি সহ আমার পরিবারের লোকজন বাধা প্রদান করি।

পরে প্রধান শিক্ষক পিয়ারা বেগম আমার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন ৩১/৫/২০২২ ইং তারিখে আমাকে নোটিশ প্রদান করে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র, দলিল পত্র ও সাক্ষীসহ গত ২/০৬/২০২২ ইং তারিখে তার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য বলেন। নোটিশ অনুযায়ী উক্ত তারিখ বেলা ১১ টায় কাগজ পত্রাদি সহ নির্বাহী অফিসার এর কার্যালয়ে উপস্থিত হই। এবং আমার জমির দলিল পত্র ও আদালতে চলমান মামলার নথিপত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেখালে তিনি কোন কিছু না দেখে আমাকে পুলিশ ও জেল হাজতে দেয়য়ার ভয় দেখিয়ে ভবণ নির্মাণের কাজে বাধা দিবে না মর্মে সাদা কাগজে জোর পুর্বক স্বাক্ষর নেন। এই কর্মকান্ডে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিনের উপরোক্ত কার্যকলাপের বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছি।

এলাকাবাসীরা বলেন, জসৎনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি মোজাহার আলী সরদার দেননি। দিয়েছেন মাদ্রাসার নামে প্রথম দলিলের কোন জমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে নাই। তারা আরো বলেন, স্কুলের সামনের জমিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন এই জমির মালিক বায়েজিদ ।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ফজলুর রহমান জানান, মোজাহার আলী সরদারের দেওয়া ৭৯০৬ নং দানপত্র দলিলে ভুল আছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, অভিযোগকারী বায়েজিদকে পুলিশ ও জেলের ভয়ভিতি দেখায়ে জোরপুর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি তিনি নিজের ইচ্ছায় স্বাক্ষর করেছেন। প্রধান শিক্ষক পিয়ারা বেগমের সরবরাহকৃত মোজাহার আলী সরদারের দানপত্র দলিলের ২য় পাতায় জগৎনগর মাদ্রাসার নামে দানপত্র করে দেওয়ার কথা মোঃ মোজাহার আলীর স্বীকারোক্তিতে লিপিবদ্ধ করা আছে এবং মোছাঃ দেলোয়ারা বেগম তাঁর পিতা ইব্রাহিম আলী সরদারের সম্পতি প্রাপ্তির অধিকারী নন বলে প্রশ্ন করলে বিষয়গুলো দেখবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ খলিদ মেহেদী হাসান পিএএ এর সঙ্গে সোমবার বিকেল ৩:২ মিনিটে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, অভিযোগটি এখনো আমি দেখিনি। অভিযোগটি দেখে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে