মহাদেবপুরে এক ছাত্রের টিউশন ফি আট হাজার টাকা

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২; সময়: ৩:০৮ অপরাহ্ণ |
মহাদেবপুরে এক ছাত্রের টিউশন ফি আট হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, মহাদেবপুর : নওগাঁর মহাদেবপুরে গোফানগর ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসায় একজন ছাত্রের জন্য প্রতিমাসে সরকারকে টিউশন ফি গুনতে হচ্ছে আট হাজার টাকারও বেশী। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কাগজে কলমে আড়াইশ জন ছাত্রছাত্রীর হিসাব দিলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। সরেজমিনে দুইদিন ওই মাদ্রাসায় গেলে প্রথমদিন শনিবার ৫৩জন ছাত্রছাত্রীর দেখা মিললেও দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায় মাত্র ২৭জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত আছে।

অথচ ওই মাদ্রাসায় সরকার প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা বেতন প্রদান করে থাকেন। বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, এবতেদায়ী থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ২৭ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত আছে। কোন কোন শ্রেণিতে একজনও ছাত্রছাত্রী উপস্থিত নাই।

বিভিন্ন ক্লাসরুম ঘুরে দেখা যায় দশম শ্রেণিতে ৯জন, নবম শ্রেণিতে ৬ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৮জন, সপ্তম শ্রেণিতে নাইম নামে একজন ছাত্র, ষষ্ঠ শ্রেণিতে চারজন, চতুর্থ শ্রেণিতে জান্নাত নামে একজন ছাত্রী উপস্থিত আছে। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণি, প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোন ছাত্রই উপস্থিত নেই।

মাদ্রাসার সুপার আব্দুল ওয়াহেদ জানান, তার মাদ্রাসায় প্রায় আড়াইশ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। কোন শ্রেণিতে কতজন জানতে চাইলে তিনি জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৩১ জন, ৭ম শ্রেণিতে ২৬ জন, ৮ম শ্রেণিতে ৩৫জন, ৯ম শ্রেণিতে ২৭ জন, ১০ম শ্রেণিতে ২৭জন ও এবতেদায়ী শাখায় ২৪জন ছাত্রছাত্রী আছে। সব মিলিয়ে ১৭০জন ছাত্র-ছাত্রীর হিসাব পাওয়া গেলেও আড়াইশ জনের হিসাব না মেলার বিষয়ে জানতে চাইলে এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি সুপার। কাগজে কলমে অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী দেখানো ছাড়াও ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ও সুপারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড না থাকা, অফিস রুমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তথ্য সংবলিত বোর্ড না থাকা, বেশ কয়েকটি পদে লোকবল নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ একাধিক শিক্ষকের মাদকের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, এই মাদ্রাসায় কোন ক্লাসই হয়না। একাধিক শিক্ষক মাদক সেবনের সাথে জড়িত। তারা নিয়মিত মাদ্রাসাতেও আসেন না, ক্লাসও নেন না। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে সুপার বা কোন শিক্ষক মুখ খুলতে সাহস পান না। মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ থাকলেও এ কারণেই এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের সন্তানদের দুরের কোন মাদ্রাসায় বা অন্য স্কুলে পড়ান। তারা দাবী করেন, মাদ্রাসার দুর্ণীতিবাজ, মাদকসেবী শিক্ষকদের অপসারণ করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনলে আবারও শিক্ষার্থীতে ভরে উঠবে এ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ মতিউর রহমান জানান, করোনার কারণে কিছু ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়া ও কিছু ছাত্র বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রী একটু কমে গেছে। মাদ্রাসার সুপার আব্দুল ওয়াহেদ তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন লেনদেন তিনি করেননি।

শিক্ষকদের মাদকের সাথে থাকার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে দুইএকজন শিক্ষক মাঝে মাঝেই মাদ্রাসা ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা একটি বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা। তবে কোন অনিয়ম ঘটে থাকলে বা কোন শিক্ষক মাদকের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান মিলন জানান, ওই মাদ্রাসা সম্পর্কে মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে