রুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ তোছরুপের অভিযোগ

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২২; সময়: ১:৩৭ অপরাহ্ণ |
রুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ তোছরুপের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যাংকে রেখেই প্রকল্প সমাপ্তির প্রতিবেদন দিয়ে অর্থ তোছরুপের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (রুয়েট) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আব্দুল আলিম নামের ওই শিক্ষক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক পদে থেকে এ অনিয়ম করেন। তিনি রুয়েটের পুরোকৌশল বিভাগের শিক্ষক।

প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগ চালুকরণ সাব প্রকল্পের সাত কোটি ৫৬ টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেন আব্দুল আলিম। তার এই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তিন সদস্যের একটি দল রোববার রুয়েটে এসেছেন। তদন্ত টিম রোববার ও সোমবার রুয়েটে অবস্থান করে বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোন প্রকল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রকল্পের সমস্ত টাকা শেষ করতে হয়। অথবা অতিরিক্ত টাকা থাকলে সেটি সরকারকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ৩০ জুন ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ব্যাংকে জমা ছিলে ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা।

এছাড়াও ওই বছরের ৯ আগস্ট প্রকল্প সমাপ্তি প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি কোনো অর্থ অবশিষ্ট নাই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল আলিম নিজেই ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন।

কিন্তু পুবালি ব্যাংক রুয়েট শাখার দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, তখনো ওই প্রকল্পের আওতায় পুবালী ব্যাংক রুয়েট শাখায় ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৪ টাকা গোচ্ছিত ছিলো। এমনকি সমাপ্তি প্রতিবেদনের পরে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প সমাপ্তি পরিদর্শনের দিন পর্যন্ত ব্যাংকে জমা ছিলো সাত কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা। যা সরকারি প্রকল্পের অর্থ আইনে বড় ধরনের অনিয়ম।

এ বিষয়ে গত ১৯ মে ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপ-পরিচালক রোকশানা লায়লা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি রুয়েটের পরিকল্পনা ও উন্নয় বিভাগের পরিচালক আব্দুল আলিমকে দেয়া হয়। সেই চিটিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির বিষয়টি তাকে অবগত করা হয়। তদন্ত কমিটির ওই তিন সদস্যের মধ্যে আছেন ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান, উপ-পরিচালক রোকসানা লায়লা ও আব্দুল আলিম।

ওই চিঠিতে বলা হয়, পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সু্বধিাদি সৃষ্টিকরণ শীর্ষক আম্রেলা প্রকল্পের আওতায় রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগ চালুকরণ শীর্ষক সমাপ্ত প্রকল্পের আর্থিক কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য রোববার ও সোমবার দুইদিন রুয়েটে অবস্থান করবেন।

এদিকে, পুবালী ব্যাংক রুয়েট শাখার দেয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, রুয়েটের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক বিভাগ চালুকরণ সাব প্রকল্পের পরিচালক প্রকল্প শেষ হওয়ার প্রতিবেদন দাখিলের পরে গত ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পাঁচ বছরে দফায় দফায় ৪৯টি চেকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৬ লাখ টাকার মতো তুলে নেন। ২০২০ সালের ৩০ জুনেও ওই হিসেবে ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৯ টাকা গোচ্ছিত ছিলো। যেটিও বড় ধরনের অনিয়মের সামিল।

সূত্র মতে, যে চেকগুলো দিয়ে প্রকল্পের মেয়াদকালের শেষেও টাকা উত্তোলা করা হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশ চেকের তারিখ কাটাকাটি ছিলো। প্রকল্পের পরিচালক আব্দুল আলিম নিজ হাতে তারিখ কেটে নতুন করে তারিখ বসিয়ে সেখানে একক স্বাক্ষর করেছেন।

রুয়েট সূত্র মতে, প্রকল্প পরিচালক আব্দুল আলিম মূলত কাজ শেষ হওয়ার পরে সেই প্রকল্পের টাকা ভিন্ন খাতে সরিয়েছেন। আর এটি করতে গিয়ে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাংকে রেখেই টাকা নাই এবং প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যা সরকারি অর্থ লোপাটের ভিন্ন কৌশল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আর এটি তদন্ত করতেই ইউজিসির একটি দল আজ রবিবার ওই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজশাহী আসছেন।

ইউজিসির প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের সদস্য ড. আবু তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যখন কোনো প্রকল্পের সার্বিক বিষয় শেষ হয়ে যায়, তখন কোনো অর্থ অতিরিক্ত থাকলে সেটি সরকারকে ফেরত দিতে হয়। এটি না করা মানে অর্থ তোছরুপের সামিল। প্রকল্প বুঝে দেয়ার পরে আর কোনো অর্থ গোচ্ছিত রাখার এখতিয়ার নাই।’

অপরদিকে, ব্যাংকের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প সমাপ্তি পরিদর্শনের পরে পাঁচ বছরে যে সাত কোটি ৬ লাখ টাকার মতো উত্তোলন হয়েছে, সেই টাকার কোনো ভ্যাট-ট্যাক্মও সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। অথচ সরকারি প্রকল্পের বিপরিতে ১০-১২ ভাগ ভ্যাট-ট্যাক্স কর্তনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন নামে বেনামে চেক ইস্যূ করে সেই টাকা উত্তোলন হলেও কোনো টাকা সরকারে কোষাগারে জমা হয়নি। যেটিও বড় ধরনের অনিয়ম করেছেন প্রকল্প পরিচালক ড. আব্দুল আলিম।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ড. আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম করিনি। আমাকে চিঠিও দেয়া হয়নি। চিঠি দেয়া হয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালককে। আমি তো এখন আর ওই পদে নাই। তবে ওই সময় ছিলাম। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতেও চাই না।’

রুয়েট ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, ‘একটি প্রকল্পের বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেটি তদন্তে ইউজিসির একটি টিম এসেছে। তবে ওই সময় আমি ভিসির দায়িত্বে ছিলাম না।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে