১৩ দিনে ৩ অভিনেত্রীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২২; সময়: ৭:৫৩ অপরাহ্ণ |
১৩ দিনে ৩ অভিনেত্রীর ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : কলকাতায় ফের দুই অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যু হয়েছে। বুধ ও শুক্রবার দুজনের দেহ উদ্ধার হয়। ১৩ দিনে তিন অভিনেত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক না পেশায় উন্নতির তাগিদ, কী কারণে এই পরিণতি?

বাংলা ধারাবাহিকের অভিনেত্রী পল্লবী দে-র মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় হয়েছে টলিউডে৷ তার রেশ কাটার আগেই মৃত্যু মডেল অভিনেত্রী বিদিশা দে মজুমদারের৷ বুধবার রাতে কলকাতার নাগেরবাজারের ফ্ল্যাটে একুশ বছরের বিদিশার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে৷

সঙ্গে মিলেছে তিন পাতার সুইসাইড নোট৷ তাতে নিজের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করেননি উঠতি মডেল৷ শুক্রবার সকালে আর এক অভিনেত্রী মঞ্জুষা নিয়োগীর দেহ উদ্ধার হয়েছে৷ দক্ষিণ কলকাতার পাটুলির বাড়ি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়৷ বিদিশার মৃত্যুর পর তার বন্ধু মঞ্জুষা বিচলিত হয়ে পড়েন বলে পরিজনদের দাবি৷ আত্মহত্যার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন, যদিও তার সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি৷

যদিও মডেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর পল্লবীর মতো ব্যক্তিগত সম্পর্কে টানাপোড়েনের কথা উঠে আসছে৷ নাগেরবাজারের ফ্ল্যাটে বন্ধু অনুভব বেরার সঙ্গে থাকতেন বিদিশা৷ জিম প্রশিক্ষক অনুভবের সঙ্গে লিভ ইন করতেন প্রয়াত মডেল৷

তার বান্ধবী দিয়া দাসের দাবি, ‘‘অনুভবের সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল বিদিশার৷ লিভ ইন পার্টনার অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ তার জেরে গন্ডগোল চলছিল৷’’ তবে দিয়া বলেছেন, অনুভব তার সঙ্গে বিদিশার প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি৷ অনুভবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে পুলিশ৷

পল্লবীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে লিভ ইন পার্টনার সাগ্নিক চক্রবর্তীর দিকে আঙুল তুলেছে মৃতের পরিবার৷ ১৫ মে কলকাতার গড়ফার ফ্ল্যাট থেকে টলিউড অভিনেত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ পরিবারের অভিযোগ, সাগ্নিক খুন করেছেন পল্লবীকে৷ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ যদিও ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, আত্মহত্যা করেছেন অভিনেত্রী৷

এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সম্পর্কের টানাপড়েনের পাশাপাশি পেশাদারি জীবনের উত্থান পতনকে অনেকে দায়ী করছেন৷ ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন মডেল বিদিশা৷ পেশাদারি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন৷ উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ার মেয়ে বিদিশা কলকাতায় এসেছিলেন কেরিয়ার গড়তে৷ বন্ধুরা বলছেন, তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছিলেন তিনি৷

এর প্রমাণ মৃতের সুইসাইড নোট৷ বিদিশা লিখেছেন, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়৷ আমার প্রফেশনাল লাইফে আমার কাজ কমে গিয়েছিল৷ তাই ইএমআই, ব্যক্তিগত খরচ, বাড়িভাড়া মেটাতে সমস্যা হচ্ছিল৷ আমি নিজের বাড়িতেও ভালো ছিলাম না৷ প্রতি মাসে আমি তিন-চারটে শুট করতাম৷ তা দিয়ে আমার কিছু হত না৷ কাউকে না জানিয়ে আমি ইভেন্ট করতাম৷ তা থেকেও আমার কিছু হতো না৷ আমি সুইসাইড করেই হ্যাপি…৷’’

এসব ঘটনার পিছনে মূল কারণ পেশার জগতে উত্থান-পতন, এমনটা না-ও হতে পারে৷ তবে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের হতাশা যে অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে, তা বলাই যায়৷ খ্যাতি ও অর্থের আকাঙ্খায় কীভাবে গ্ল্যামার দুনিয়ায় ঝাঁপ দিচ্ছেন তরুণ‍ীরা, তা উঠে এসেছে মঞ্জুষা নিয়োগীর মায়ের বক্তব্যে৷

শুক্রবার মেয়ের দেহ উদ্ধারের পর তিনি বলেন, ‘‘লোভ, উচ্চাকাঙ্ক্ষাই শেষ করে দিল আমার মেয়েকে৷ শুধু টাকা রোজগার করতে চাইত৷ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন থেকে এই পথে চলে গেল৷ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করব না৷’’ চিকিৎসা জগৎ থেকে ছোট পর্দার অভিনয়ে আসা কিঞ্জল নন্দের মতে, ‘‘ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে শুটিংয়ের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে৷ সিনেমার ক্ষেত্রে থাকে না৷ প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়৷ নিজের লক্ষ্যের দিকে ছুটতে গিয়ে অনেকে হতোদ্যম হয়ে পড়েন৷’’

পল্লবী, বিদিশা বা মঞ্জুষার ঘটনা সাম্প্রতিক৷ তার আগে বেশ কয়েকজন ছোট পর্দার অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যু হয়েছে৷ ২০১৮-র মার্চে টালিগঞ্জে মৌমিতা সাহার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়৷ টিভি ধারাবাহিকের অভিনেত্রী মৌমিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পেশাগত হতাশার কথা প্রকাশ করেছিলেন৷ সেই বছরের সেপ্টেম্বরে উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ির হোটেলে অভিনেত্রী পায়েল চক্রবর্তীর দেহ মেলে৷

ছোট পর্দার দুনিয়ার রহস্যমৃত্যুর তালিকায় রয়েছে বিতস্তা সাহার নাম৷ ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে গড়ফা থানা এলাকায় অভিনেত্রীর বাসভবন থেকে মেলে তার দেহ৷ বছর সাতেক আগে অভিনেত্রী দিশা গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল৷ ২০১৫-য় মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি আত্মঘাতী হন৷

বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশকে৷ একইভাবে একাকীত্বের গ্রাসেও পড়ছেন গ্ল্যামার দুনিয়ার নবাগতরা৷ মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের বক্তব্য, ‘‘এরা বাড়ি থেকে দূরে থাকেন৷ অনেক ক্ষেত্রেই এঁদের পেশা, জীবনযাত্রার প্রতি অভিভাবক বা পরিবারের সমর্থন থাকে না৷

সমস্যায় পড়লেও তারা নিজেদের কথা বলতে পারেন না৷ ফলে আরো হতাশায় ডুবে যান৷’’ চলচ্চিত্র বিদ্যার শিক্ষক মানস ঘোষ বলেন, ‘‘আগের থেকে এখনকার সিনে দুনিয়া পাল্টে গিয়েছে৷ প্রতিযোগিতা বেড়েছে৷ বাইরে থেকে যেটা ঝকঝকে মনে হয়, সেই শিল্পের অন্দরে চ্যালেঞ্জ মারাত্মক৷ তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে অনেকে অবসাদের শিকার হচ্ছেন৷ এ সব তারই পরিণতি৷’’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে