আক্কেলপুরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২২; সময়: ৬:২৪ অপরাহ্ণ |
আক্কেলপুরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে বিএনপির ‘পকেট কমিটি’ গঠনের প্রতিবাদ ও তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এসময় তারা ওই পকেট কমিটি গঠনের মূল নায়ক হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও থানা পর্যায়ের দুই নেতাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।

সেই সাথে ওই দুই নেতার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। রোববার (২২ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোপীনাথপুর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসব কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, দলের ত্যাগী, দক্ষ ও পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জেলায় বসে তিন সদস্যের ওই পকেট কমিটি গঠিত হয়েছে।

এ ঘটনায় গোপীনাথপুর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে গোপীনাথপুর বাজারের সড়ক ঘুরে ওই স্থানে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে বক্তব্য দেন, গোপীনাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক হুমায়ন কবির রানা, সাবেক যুগ্ন আহবায়ক আপেল মাহমুদ বকুল, সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মাহবুব আলম রেন্টু, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাবেক যুবদলের আহবায়ক মোঃ শামীমসহ অনেকেই।

বক্তব্যে নেতারা বলেন, গত ১৮ মে গোপীনাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা যায় বিগত দিনে মামলা হামলার স্বীকার, ত্যাগী, দক্ষ, ও রাজপথের পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। আক্কেলপুর আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে আহবায়ক জামসেদ আলমকে নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তিনি আক্কেলপুরে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে না এবং পরবর্তীতে দলের প্রথম সভা বা কোন কার্যক্রম করতে পারেন নাই।

হঠাৎ করে জামসেদ আলম ও বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান জয়পুরহাট জেলায় বসে জেলা কমিটির আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়কের হস্তক্ষেপে আমাদের ইউনিয়নে একটি পকেট আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এতে দলের ত্যাগী, দক্ষ ও পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এক পেশে পকেট কমিটি দেওয়া হয়েছে। সেই কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এই পকেট কমিটি প্রত্যাখান ও বাতিলের জোর দাবি করছি।

এই এক তরফা পকেট কমিটি প্রদানের মূল নায়ক কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান চন্দনের সাথে স্বাক্ষাত না করলে বা তার আনুগত্য প্রকাশ না করলে কেউ কোন পদ পদবী পাবে না। এই কারণে দলের মধ্যে বিভেদ ও গ্রুপিং প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছে।

দলের জন্য ক্ষতিকারক ওবায়দুর রহমান চন্দনকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হচ্ছে এবং এই পকেট কমিটি গঠনের হোতা আক্কেলপুর থানা কমিটির আহবায়ক জামসেদ আলমকেও অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়। সেই সাথে দলের এই দুঃসময়ে ত্যাগী, দক্ষ ও পরিক্ষীত নেতাকর্মীদ্বারা ৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রস্তাবিত আহবায়ক কমিটি উপস্থাপন করলাম। এ বিষয়ে জেলা বিএনপি, কেন্দ্রীয় বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের আশুহস্থক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এরপর সেখানে জামসেদ আলমের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এর আগে একই দাবিতে শনিবার (২১ মে) বিকেলে একই উপজেলার রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির ‘পকেট কমিটি’ গঠনের প্রতিবাদ ও তা বাতিলের দাবিতে রায়কালী স্কুলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ওই ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, শহিদুল ইসলাম তালুকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সোয়েব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হান্নান, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম (সাবেক মেম্বার), ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা তালুকদার, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শরিফ উদ্দিন, বিএনপি নেতা জহুরুল আলম, ইয়াকুব আলী, রফিকুল, ফেরদৌস জোয়ারদার সহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে আক্কেলপুর থানা বিএনপির আহবায়ক জামসেদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, রায়কালী ইউনিয়ন বিএনপির তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে একজন আহবায়ক ও দুইজন যুগ্ম আহবায়ক। ওই কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা বহুদিন ধরে ওই ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা তাদেরকেই কমিটিতে স্থান দিয়েছি। ওই কমিটির স্থান পাওয়া তিনজন হলেন, আহবায়ক মো. নুরুজ্জামান, যুগ্ম আহবায়ক মোশারফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম। আমাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ঠিক না।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান চন্দন সাংবাদিকদের বলেন, ১৬০-৬২ টি থানা-পৌরসভা কমিটি রয়েছে। আমি ওই কমিটির বিষয়ে জানিনা। এটি জেলা কমিটি বলতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক শামসুল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুদ রানা প্রধান সাংবাদিকদের বলেন, জেলার ৩২ টি ইউনিয়নে নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। যারা এসব কাজ করছে তারা দলকে বিতর্কিত করছে। তারা দলের ভালো চায় না। তারা বিএনপির শুভাকাঙ্খি নয়। তারা সঠিক পথে এসে রাজনীতি করুক। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নেই। বিশেষ একটা পক্ষ তাদের দিয়ে এসব করাচ্ছেন।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে