শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের তালা দিয়ে শিক্ষকদের ভুরিভোজে যাওয়ায় তদন্ত

প্রকাশিত: মে ২২, ২০২২; সময়: ৫:১৯ অপরাহ্ণ |
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের তালা দিয়ে শিক্ষকদের ভুরিভোজে যাওয়ায় তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, মান্দা : স্কুলকক্ষে পঞ্চম শ্রেণির ১৩ জন ছাত্র-ছাত্রীকে তালাবদ্ধ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভুরিভোজে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকেরা। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পরেও শিক্ষকেরা স্কুলে ফিরে না আসায় ছাত্র-ছাত্রীরা কান্নাকাটি ও চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে।

এ অবস্থা দেখে গেটের তালা ভেঙে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনসহ অভিভাবকেরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার পাঁজরভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

শিক্ষকদের এমন কর্মকান্ডে অভিভাবকসহ স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

রোববার (২২ মে) ঘটনার তদন্তে যান উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চম শ্রেণির ১৩ ছাত্র-ছাত্রীকে তালাবদ্ধ করে শিয়াটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন পাঁজরভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগমসহ ছয়জন শিক্ষক। দুপুরে তাঁরা ভুরিভোজেও অংশ নেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাঁরা স্কুলে ফিরে না আসায় ছাত্র-ছাত্রীরা কান্নাকাটি ও চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে।

এ অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজন ও অভিভাবকেরা স্কুলে ছুটে আসেন। তাঁরা স্কুলগেটের তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের সময় শিক্ষকেরা সেখানে উপস্থিত হন। অবস্থা বেগতিক দেখে অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম।

স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর নবী সরদার জানায়, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুলগেটে তালা দিয়ে সব শিক্ষকেরা দাওয়াত খেতে চলে যান। বিকেল পর্যন্ত শিক্ষকেরা স্কুলে ফিরে না আসায় আমরা ভয় পেয়ে যাই। এসময় অনেকে কান্নাকাটি শুরু করে। অনেকের তেষ্টা পেলেও পানি খেতে পারেনি।’

শিয়াটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনায় তাঁর প্রতিষ্ঠানে কশব ইউনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ের আন্তপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। অনুষ্ঠানে পাঁজরভাঙ্গা স্কুলের সব শিক্ষকেরা যোগদান করেছিলেন।

শিক্ষার্থী সাথী আক্তারের মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে এমন সংবাদে তিনি বিদ্যালয়ে ছুটে যান। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গেটের তালা ভেঙে ছাত্র-ছাত্রীদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়।’

পাঁজরভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম বলেন, ‘সরকারি প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য সব শিক্ষকেরা শিয়াটা স্কুলে গিয়েছিলাম। তবে শিক্ষার্থীদের ভেতরে রেখে তালাবদ্ধ করে যাওয়া ঠিক হয়নি।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার সামসুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজটি ঠিক করেননি। এটি তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে