বাংলাদেশ সৃষ্টির পর প্রথম রাস্তা পেলও নওগাঁর কালীপুর-ভীমপুর এলাকাবাসী

প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২২; সময়: ৭:২১ অপরাহ্ণ |
বাংলাদেশ সৃষ্টির পর প্রথম রাস্তা পেলও নওগাঁর কালীপুর-ভীমপুর এলাকাবাসী

আরিফুল হক সোহাগ, নওগাঁ : বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর এই প্রথম রাস্তা পেলও বিল পারের মানুষেরা। যেখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা না থাকার কারনে জমির ফসল একসময় পরিবহণের অব্যবস্থাপনার কারনে নষ্ট হত জমিতে। এমনকি যেটুকু পরিবহণ সম্ভব হত সেটাও দ্বিগুণের বেশি খরচ করতে হত কৃষকদের। এছাড়া শহরে যাতায়াতের জন্য প্রায় ২৫-৩০ কি মি পথ ঘুরে যেতে হত।

নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ি ইউনিয়নের কালীপুর টু ভীমপুর রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪১০০ মিটার, প্রস্থ্যে প্রায় ১৬ফিট এবং ফসলি ভূমি থেকে উচ্চতা স্থানভেদে প্রায় ১৭ ফিট। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে ১৫৯ মেট্রিকটন চাল, ১৫৯ মেট্রিকটন গম এবং নগদ অর্থ ৭৫লক্ষ ৫৮ হাজার ৯২৫টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই মাটির রাস্তার কাজ প্রায় শেষের দিকে।

হাসাইগাড়ি ইউনিয়নে বারোমাসি বিল এলাকায় প্রায় ১হাজার পরিবার বসবাস করে থাকেন যাদের বাৎসরিক প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে কৃষিকাজ। ঐ বিলে প্রায় ১০-১২ হাজার বিঘার ধান প্রতি বছর উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসলও উৎপাদন করে থাকেন স্থানীয় চাষীরা। পুর্বে যেখানে ইরি বোরো মৌসুমে জমি থেকে ফসল ঘরে তুলতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হত সেখানে এ বছর এই রাস্তা হওয়ার পর ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।

এছাড়া শহরে জরুরী প্রয়োজনে যেখানে ২৫-৩০ কি মি রাস্তা ঘুরে যেতে হত এখন ১২-১৫ কিমি মধ্যেই শহরে প্রবেশ করতে পারবেন স্থানীয়রা। এছাড়া নিচু ভূমি হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে যেখানে থৈ থৈ পানি থাকার কারনে নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে হত এখন এই রাস্তা হওয়ার কারনে সব মৌসুমেই প্রচলিত গাড়ি ব্যবহার করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে যাতায়ত করতে পারবেন এমটাই জানাচ্ছিলেন কয়েকজন উপকারভুগী এলাকাবাসী। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথম যাতায়াত ব্যবস্থার এমন সুবিধা পাওয়ায় সরকার প্রধান ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন উপকারভুগীরা।

এ দিকে রাস্তা নির্মানে কোন প্রকার অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি বলে দাবী করেছেন নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার মেকের আলী। তিনি জানান- ৪১০০ মিটার তথা ৪কি মি ১০০ মিটার এই রাস্তার কাজ প্রায় শেষের দিকে। রাস্তাটিতে তাঁরা অন্যত্র থেকে মাটি নিয়ে এসে রাস্তার নির্মানের কাজ খুব দ্রুততার সাথে করে যাচ্ছেন। কাজ শেষ হওয়ার পর রাস্তাটি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

বর্তমানে মোটরসাইকেল, টমটম, ভ্যানগাড়ি, সাইকেল ইত্যাদি যানবাহন চলাচল করছে রাস্তাটিতে। নির্মান কাজ শেষে এটিতে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মক্ত করে দেওয়া হবে। তবে সরকার রাস্তাটি যদি দ্রুত পাকা করনের ব্যবস্থা নিলে চলাচলের আরও সুবিধা এবং পর্যটনের দাড়ও উন্মক্ত হবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে নওগাঁ সদর উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা (পি আই ও) মাহাবুবুর রহমান জানান- বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর এই প্রথম ঐ এলাকার মানুষ রাস্তা পেলও। যার অবদান বর্তমান সরকারের এবং বিশেষ করে সদর -০৫ আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন এর।

এতে করে ওই অঞ্চলের মানুষের কৃষিখাতে ব্যপক উন্নয়ন হবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন- যেখানে পুর্বে ফসল পরিবহনে ৩হাজার থেকে ৪হাজার টাকা খরচ হত সেখানে এখন থেকে ৫০০ থেকে ১০০০টাকা খরচ হবে। পুর্বে সহজে ফসল পরিবহণের জন্য কৃষকরা যানবাহন পেত না । কিন্তু রাস্তাটি হওয়ার পর এখন খুব সহজে তা পাবে। জরুরি কোন রোগি অথবা শহরে যাতায়তের জন্য যেখানে প্রায় ৩০ কি মি রাস্তা ঘুরে যেতে হত এখন তা কমে ১৫ কি মি তে চলে আসবে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন বলেন- বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রাম থেকে শহর আর শহর থেকে গ্রাম সর্বোত্র উন্নয়নের ছোয়া বিরাজমান। তারই ধারাবাহিকতায় হাসাইগাড়ি ইউনিয়নের কালীপুর-ভীমপুর গ্রামের মানুষদের অনেক দিনের দাবী ছিলো এই রাস্তা নির্মান করে দেওয়ার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে গ্রামকে শহরে পরিনত করার যে পরিকল্পনা তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই রাস্তাটি। তবে শুধু মাটির রাস্তা নয় এই রাস্তাটিকে পাকাকরনসহ সাইট বল্ক এর কাজ অতি দ্রুত শুরু করা হবে বলে জানান দেশের সর্বোকনিষ্ঠ এই সংসদ সদস্য।

এই একটি রাস্তা বর্তমানে পাল্টে দিয়েছে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথম রাস্তা পেয়ে আনন্দিত এলাকাবাসী।

 

 

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে