বাঘায় অনার্য ঐতিহ্যের চড়ক খেলা ও শৈব মেলা

প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২২; সময়: ৮:০৪ অপরাহ্ণ |
বাঘায় অনার্য ঐতিহ্যের চড়ক খেলা ও শৈব মেলা

জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, বাঘা: শিব পূজা উপলক্ষে শত শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে আয়োজন করা হয় অনার্য এতিহ্যের ‘চড়ক’ খেলা ও শৈব মেলা। শরীরে বড়শি ফুটিয়ে মানুষকে শুন্যে ঝুলানো চড়ক পূজা নিষিদ্ব করা হলেও ঐতিহ্য ধরে রাখতে সন্ন্যাশীর পিঠে বড়শি ফুটিয়ে চড়কে পাক ঘুরানো হয় ।

নির্মম নৃশংস রক্তা রক্তি কান্ড হলেও শিব পূজার ভক্ত অনুরাগিরা নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও ‘চড়ক’ ঘুরানো অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরিবারের মঙ্গল কামনায় বংশ পরম্পরায় এটি পালন করে আসছে।

গত রোববার (১৫ মে) সেখানকার আদিবাসীরা নিজের শরীরে লোহার বড়শি ফুটিয়ে খোলা মাঠে ‘চড়ক’ গাছে ঘুরপাক খেয়ে নেচে গেয়ে তা পালন করেন তারা। উপজেলার আড়পাড়া-শ্রীরামপাড়া এলাকায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিবাসিরা মূলত শিব পূঁজাকে কেন্দ্র করে এর আয়োজন করে।

বাঘা উপজেলা থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে আড়পাড়া গ্রাম । সরেজমিনে এই গ্রামে অনুষ্ঠিত ‘চড়ক’ মেলা ঘুরে আনন্দ বেদনার নানা দৃশ্য চোখে পড়েছে। প্রথমত পূঁজার ঘরে খালি গায়ে মূল সন্ন্যাসিকে মাটিতে শোয়ানোর পর ৪জন শক্ত সমর্থ মানুষ দুই হাত দুই পা চেপে ধরে আঙ্গুলের মতো মোটা লম্বা দুটি লোহার বড়শি মেরুদন্ডের দুই পাশে ফুটিয়ে দিল। সংগে সংগে শরীর থেকে বেরিয়ে এলো রক্ত।

এরপর বড়শিতে নুতুন একটি গামছা বেঁধে সন্ন্যাসীকে শুন্যে তুলে ধরে চড়ক গাছের ৩০ ফুট ওপরে ঝুলিয়ে একে একে সাত পাক ঘুরানোর পর, অন্য সঙ্গীরা মাটিতে নামিয়ে বড়শি খুলে দেয়। এভাবেই হাতে দড়ি নিয়ে বড়শি বিদ্ব শরীর নিয়ে ‘চড়ক’ গাছে ঘুরপাক খায় মূল সন্নাসী। এর এক দিকে থাকে বড়শি বিদ্ব বিহীন আরেকজন মানুষ। এইদিন বিকেল ৬ টা থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এভাবেই ঘুরানো হলো ৪জনকে।

চড়কে পাক খাওয়া সন্যাসীরা জানান, মন শান্ত আর প্রানেভক্তি মানে ‘চড়ক’ ঘোরা কোনো কষ্টের বিষয় নয়। ভগবান সংগে থাকলে ব্যাথা লাগবে কেন। তবে এতটুকু বোঝা গেছে বড়শি বিদ্ধের যন্ত্রনা তারা সহ্য করলেও অভিভাবকরা প্রিয় সন্তানের সে যন্ত্রনা ভোগ করেছেন। উৎসবে মেতে উঠা অনেককেই দেখা গেছে নেশাজাতীয় দ্রব্য পাণ করা অবস্থায়। ‘চড়ক’খেলার শৈব মেলায় এসেছিলেন আড়াই বছর বয়সের সাঈদ।

তার সাথে ছিল,বোন সালমা,ইলমা,মৌ ও বড় ভাই জুয়েল। তারা জানান,ভালো লাগার মধ্যে ছিল শরীরে বড়শি ফুটিয়ে শূণ্যে ঘোরানোর বেদনার যন্ত্রনা। ৬০ বছর বয়সের আজিজুল জানান,মাতলামি না করলেও নেশায় পূঁজা সম্পর্কে জানা যায়, শিব ভক্ত বান রাজা তার সঙ্গীদের নিয়ে শিবকে পাওয়ার জন্য প্রার্থনায় মত্ত হয়ে নিজের শরীর থেকে রক্ত বের করে তা শিবের উদ্দেশ্য নিবেদন করেন।এতে শিব খুশি হয়।

এ কারনেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের আদিবাসি বা শৈব সম্প্রদায়ের মানুষ শিবকে খুিশ করার জন্য শরীরের রক্ত ঝরিয়ে খোলা মাঠে ‘চড়ক’ উৎসবের আয়োজন করে আসছে। এ সম্পর্কে নাটোরের লালপুরের অরবৃন্দ ঠাকুর জানান, দিবাসীদের ধর্ম বিশ্বাসে ছেলেমেয়েদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আদিবাসীরা শিব পূঁজার ধর্মীয় আচরণের মাধ্যমে “চড়ক’ উৎসব পালন করে থাকেন। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আদিবাসি সাঁওতাল, ওরাঁও, মাহাতো, তাদের নিজ নিজ রীতিতে প্রতিবছর এ উৎসবে মেতে ওঠেন। যারা পূজায় অংশগ্রহণ করেন তাদের আমিষ খাবার, হলুদ, তেল ও সবরকম মসলাজাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হয়। সেখানকার সমাজ প্রধান রুপকুমার জানান, শত শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে শিব পূঁজায় এর আয়োজন।

অনেকে মন বাসনা পূর্ণের জন্য মানত করেন। গল্প আছে-এখানে মানত করলে কঠিন রোগ থেকে মুক্তি মেলে। নেশাজাতীয় দ্রব্য পাণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আনন্দের জন্য তারা তালের রস পাণ করে থাকেন। বিগত বছরে করোনার কারণে এর আয়োজন করতে পারেননি তারা। এবার কোন কমিটির মাধ্যমে আয়োজন করা হয়নি।

নিজেরাই আয়োজন করেছেন। এই আয়োজনে তেমন কোন অনুমতি লাগেনা বলে জানান তিনি। অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন জানান, এ বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে