হাল না ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ানো, সাথী হয়েছে চা

প্রকাশিত: ১৮-০৩-২০২২, সময়: ১৬:৪১ |
Share This

তানজিলা চৌধুরী প্লাবনী : ফার্ণিচার ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রফিক ঘরে বসে ছিলেন দীর্ঘ কয়েক বছর। ফুটপাতে চা ব্যবসায়ের মাধ্যমে শুরু হয় তার ভাগ্যের পরিবর্তন। সন্তানদের লেখাপড়া থেকে বৃদ্ধ মায়ের খরচ চলছে এই চা বিক্রয়ের টাকায়।

সকলের জীবনেই একটা খারাপ সময় আসে। কেউ হাল ছেড়ে দেয়, কেউ বা ভাঙা স্বপ্ন থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখে ভাগ্য পরিবর্তনের। তেমনি একজন রফিক।

রাস্তা সংস্কারের কাজে ভাঙা পড়ে তার ফার্ণিচারের দোকান। বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে ঘরে বসতে হয় তাকে। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী রফিকের কাছে পরিবারের সদস্যদের খরচ চালানোর জন্য ধার-দেনা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। মাথার উপর ছিল ঋণের বোঝা। কিন্তু হাল ছাড়েননি রফিক।

কাজ খুঁজতে পাড়ি দেন ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে। সেখানে যেয়ে কাজ করেন চায়ের স্টলে। কয়েকদিনের ব্যবধানেই সেখান থেকে আয়ত্ব করেন দুধ চা, রঙ চা, লেবু চা ছাড়াও নানা স্বাধ ও ফ্লেভারের হরেক রকম চায়ের রেসিপি।

২০১৭ সালে ফিরে আসেন নিজ শহর রাজশাহীতে।নগরীর উপশহর এলাকার কামারুজ্জামান কলেজের সামনে ফুটপাতে একটি ছোট চায়ের স্টল দিয়ে শুরু করেন নতুন জীবন।

১৭ রকমের চা নিয়ে রফিকের “স্বর্ণব টি স্টল” এর যাত্রা শুরু হয়। এখানে তিনি দুধ চা, মসলা চা, রঙ চা, লেবু চা ছাড়াও ঢাকা থেকে শিখে আসা বিভিন্ন ফ্লেভারের চাও রাখেন। হরেক রকম চা থাকায় অল্পদিনেই আশেপাশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে “স্বর্ণব টি স্টল”। যেখানে বর্তমানে প্রায় এক হাজার কাপ চা বিক্রয় হয় দৈনিক।

তার স্টলের সবচেয়ে জনপ্রিয় চা কোনটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বর্ণব লেবু চা আমার স্টলের সবচেয়ে জনপ্রিয় চা। এছাড়াও রেড মাল্টা চা, হরলিক্স চা, মালাই চাও জনপ্রিয়।”

স্বর্ণব লেবু চা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণই তার নিজস্ব রেসিপি থেকে বানানো চা। যেটি মূলত ফলের রস দিয়ে বানানো হয়। লেবু, মাল্টা, কমলা, অল্প একটু মরিচ ও তার বানানো ৩ রকম মসলা দিয়ে তৈরি করা হয় এই চা। আর এই জনপ্রিয় চা তিনি তার ছোট ছেলে স্বর্ণবের নামে উৎসর্গ করে নাম দেন স্বর্ণব লেবু চা। স্বর্ণব লেবু প্রতি কাপ চায়ের দাম ২৫টাকা।

বিভিন্ন রকম ফলের রস দিয়ে চা বানানোর পেছনের কারণ জানতে চাইলে রফিক বলেন, “চায়ের ব্যবসা তো কমন একটা ব্যবসা। আমি চাইসি একটু ভিন্নভাবে কিছু করতে যাতে চায়ের স্বাদেও ভিন্নতা আসে আবার মানুষের শরীরের জন্যও ভালো হয়। তাই ফলের রস থেকে চা বানানো শুরু করি।”

তার এসব চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বর্ণব লেবু চা, রেড মাল্টা চা সহ বেশিরভাগ চা ই ফলের রস দিয়ে তৈরি যা শরীরের জন্য উপকারী। আর লেবু, মাল্টার মত টক ফল দিয়ে বানানোর কারণে উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্যও স্বাস্থ্যকর।

স্টলে আসা কয়েকজন নিয়মিত গ্রাহকের কাছে রফিকের চা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এখানের রেগুলার কাস্টমার। আমার বাসা এই এলাকায় না হলেও প্রতিদিন বন্ধুদের সাথে এখানেই আড্ডা দেই আর কাকার চা খাই। কাকার প্রতিটা চায়েই অন্য স্টলের চায়ের চেয়ে ভিন্নতা রয়েছে। আর এজন্যই প্রতিদিন এখানে আসি।

তার দৈনিক মুনাফা সম্পর্কে জানতে চাইলে রফিক জানান, প্রায় ৭০০/৮০০টাকা মুনাফা হয় দিন প্রতি। এছাড়াও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটাতো ফুটপাতের উপর স্টল। একদিন না একদিন সরাতেই হবে। স্বপ্ন আছে কফিশপের মত বড় করে চায়ের দোকান দেওয়ার। যেখানে সবাই সুন্দর কইরা বইসা আমার বানানো চা খাইতে পারবে।নিজের রেসিপি দিয়া বানানো চা আরো মানুষের কাছে চেনানোর ইচ্ছা, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।”

রফিকের এই “স্বর্ণব টি স্টল” একদিন শহরের বড় স্বনামধন্য টি স্টলে পরিণত হবে এবং হাল না ছেড়ে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য স্বপ্ন দেখতে এবং স্বপ্ন অনুযায়ী কাজ করতে প্রেরণা দিবে আরো অনেককে এই কামনা তার গ্রাহকদের।

লেখক- শিক্ষার্থী, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
উপরে