কেন ওমিক্রনকে ভয় পাওয়া উচিত

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২২; সময়: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ |
কেন ওমিক্রনকে ভয় পাওয়া উচিত

পদ্মাটাইমস ডেস্ক : দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণে আগের ধরনগুলোর তুলনায় ‍অসুস্থতার মাত্রা মৃদু হওয়ায় কোভিড- ১৯ এখন আগের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে একটি ধারণা ডালপালা মেলছে।

এক্ষেত্রে কেউ কেউ জানতে চাইছেন, আগে কিংবা পরে কোনো এক সময় সবাইকে যদি এই ভাইরাসে আক্রান্তই হতে হয়, তবে এই মুহূর্তে সংক্রমণ ঠেকানার এত উদ্যোগ নেওয়ার দরকার কী?

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রন নিয়ে এখনই অত হেলাফেলা করার সময় আসেনি। কেন তারা এই সতর্কতার কথা বলছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে।

এখনও গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন

গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর তুলনায় ওমিক্রনে উপসর্গ ছাড়াই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।

যাদের উপসর্গ রয়েছে, তাদের বড় একটি অংশের অসুস্থতার মাত্রা ছিল হালকা। গলাব্যথা বা সর্দি থাকলেও ভাইরাসের আগের ধরন ডেল্টার সংক্রমণের মত শ্বাসকষ্টের সমস্যা অত হচ্ছে না।

কিন্তু অনেক দেশে ওমিক্রনের অস্বাভাবিক সংক্রমণের মানে দাঁড়াচ্ছে, আরও বেশি সংখ্যক মানুষ গুরুতর রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে ইতালি ও জার্মানির সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যায়, যারা টিকা নেননি, এমন ব্যক্তিদের হাসপাতালে কিংবা আইসিইউতে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।

রকফেলার ইউনিভার্সিটির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ মিশেল নুসেনজওয়েইগ বলেন, “আমি স্বীকার করছি, আজ নয়তো কাল প্রত্যেককেই এর মুখোমুখি হতে হবে, কিন্তু পরেই ভালো। কেন? কারণ, পরে আমাদের কাছে এর চেয়ে ভালো এবং আরও সহজলভ্য ওষুধ এবং আরও ভালো টিকা থাকবে।

আপনার মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে

আপনি হয়ত খুব সামান্যই অসুস্থ হয়েছেন, কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি আছে এমন কেউ আপনার মাধ্যমে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে।

এমনকি ইতোপূর্বে সংক্রমণের কারণে কিংবা টিকা নেওয়ার ফলে আপনার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও তেমনটা ঘটতে পারে বলে জানান, ইয়েল ইউনিভার্সিটির ‘ভাইরাল ইমিউনোলজি’র গবেষক আকিকো ইওয়াসাকি।

ওমিক্রনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও অজানা

করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর সংক্রমণে এবং মৃদু সংক্রমণে কিংবা টিকা নেওয়ার পর যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের কারো কারো কোভিডের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব দেখা গেছে।

আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোভিডের প্রভাব পড়েছে এমন সংক্রমণের অনুপাত কতটা, সে বিষয়ে আমাদের কাছে এখনও কোনো তথ্য নেই। যারা ওমিক্রনকে হালকাভাবে দেখছেন, তারা নিজেদের শারীরিক দুর্বলতার মত দীর্ঘস্থায়ী জটিলতার ঝুঁকিতে ফেলছেন। এটা কয়েক মাস কিংবা কয়েক বছর ধরেও থাকতে পারে।

ওমিক্রনে সংক্রমণের কোনো ‘নীরব’ প্রভাব রয়েছে কি না তাও এখনও স্পষ্ট নয়। আগের ধরনগুলোতে সংক্রমণের ফলে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি অনেকের ক্ষেত্রে সুস্থ কোষকে আক্রমণ করেছে। ইনসুলিন উৎপাদনের কোষেও পরিবর্তন দেখা গেছে।

ওষুধের সরবরাহ স্বল্পতা

মহামারীর আগের ঢেউয়ের সময় তিনটি অ্যান্টিবডি থেরাপি ব্যবহার করা হয়েছিল, যার দুটি ওমিক্রনের ক্ষেত্রে অকার্যকর। আর যে থেরাপি কিছুটা কার্যকর হতে পারে, সেটার সরবরাহ এতেটাই কম যে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকরা অত্যন্ত হিসাব করে এর ব্যবহার করেছেন।

ফাইজারের তৈরি মুখে খাওয়ার নতুন ওষুধ ‘প্যাক্সলোভিড’ ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কাজ করে বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে। তবে অসুস্থ হলে এসব ওষুধ নাও পেতে পারেন।

রোগীতে ভরে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো

কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা নেই এমন ব্যক্তিরা টিকার দুটি পূর্ণ ডোজ এবং বুস্টার ডোজ নিলে ওমিক্রনে ‘খুব বেশি ক্ষতি হবে না’ বলে জানিয়েছেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এবং ইমিউনোলজির অধ্যাপক ডেভিড হো।

বিশেষ করে এই সময়ে যতদিন পর্যন্ত সংক্রমণ কম থাকবে ‘ততদিনই ভালো’ মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড পরিস্থিতি তুলে ধরেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ওমিক্রনের সর্বোচ্চ ঢেউ এখনো আসেনি, এরই মধ্যে হাপাতালগুলো উপচে পড়ছে।

হাসপাতালে রেকর্ড সংখ্যক রোগীর কারণে চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার এবং ক্যান্সারের চিকিৎসা স্থগিত রেখেছেন। মহামারীর আগের ঢেউগুলোতে হার্ট অ্যাটাকসহ জরুরি ক্ষেত্রেও যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারেনি হাসপাতালগুলো। আবার স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হলে তারা হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা বা সেবা দিতে পারছেন না। এটাও সঙ্কটে ফেলছে অনেক হাসপাতালকে।

সংক্রমণ বেশি হলে আসবে আরও নতুন ধরন

সার্স-সিওভি-২ এর অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের প্রভাব বিস্তারকারী পঞ্চম ধরন হচ্ছে ওমিক্রন। এর মিউটেশন বা পরিবর্তিত হওয়ার গতি ভবিষ্যতে ধীর হয়ে যাবে কি না সে বিষয়টি এখনও জানা নেই।

সংক্রমণের উচ্চ হারও ভাইরাসের মিউটেশনের সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, করোনাভাইরাসের পরের ধরনটি আগেরগুলোর চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

অধ্যাপক ডেভিড হো বলেন, “গত দুই বছর ধরে সার্স-সিওভি-২ আদের নানাভাবে বিস্মিত করেছে। এই ভাইরাসের ক্রমববিকাশের গতিপথ নিয়ে আমাদের ভবিষ্যদ্বাণী করার কোনো উপায় নেই।”

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে