শ্রমিক সংকটে দিশেহারা বদলগাছীর কৃষক

প্রকাশিত: মে ১৪, ২০১৯; সময়: ১:৫৫ pm |
খবর > কৃষি
শ্রমিক সংকটে দিশেহারা বদলগাছীর কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, বদলগাছী : নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় চলতি মৌসুমে সর্বত্রই চলছে মাঠ থেকে ইরি-বোরো ধান ঘরে তোলার ধুম। ফলে চলতি বোরো মৌসুমের ধান কেটে-মাড়াই করে গোলায় তুলতে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। কিন্তুু শ্রমিক সংকটের কারনে দিশেহারা পড়েছে এই উপজেলার কৃষকরা। এক মণ ধানের দামেও মিলছে না একজন শ্রমিক।

উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মাঠ গুলোতে একযোগে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ায় এই সংকট দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে, নতুন ধান বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৫ শ’ থেকে সাড়ে ৫ শত ’টাকা দরে। অথচ একজন শ্রমিকের দাম হাকানো হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ থেকে ৭শত টাকা পর্যন্ত। কিছু কিছু এলাকাতে এ মজুরি আরও বেশি। শ্রমিকের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। সম্প্রতি ফণির প্রভাবে বৃষ্টি হাওয়ায় মাঠের বেশির ভাগ ধান জমিতেই নুইয়ে পড়েছে। একারনে নুয়ে পড়া ধান কাটতে শ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি লাগছে বলে কৃষকরা জানান।

এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষি শ্রমিকের দাম বেশি থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছে চাষিরা। তাদের এই হতাশা পুরো মৌসুম জুড়ে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে শ্রমিক স্বল্পতা ও অতিরিক্ত মজুরি। শ্রমিক সংকট ও মজুরির অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এক মণ ধানের বাজার মূল্য একজন শ্রমিকের দিনের পারিশ্রমিকের সমান।

উপজেলার কোলা ইউনিয়নের কৃষক তাছির জানান, প্রতিবিঘা ধান কাটতে শ্রমিক মজুরী হিসাবে ৪ হাজার ৫শত টাকা থেকে ৫হাজার ৫শত টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। তবুও সময়মত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

হলুদবিহার এলাকার কৃষক শাহীন জানান, প্রতিবছর রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার শ্রমিকরা এ এলাকায় ধান কাটতে আসলেও এবার তেমন বেশি না আসাই এবং ফণির কারনে ধানের জমিতে পানি জুমে থাকাই ও ধান গাছ নুইয়ে পরার কারণে শ্রমিকদে বেশি দাম দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে।

উপজেলার কোলা এলাকার স্থানীয় কৃষক ও প্যানেল চেয়ারম্যান শাহীনুর ইসলাম স্বপন বলেন, ফণির কারনে অন্য কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও অতি বৃষ্টিতে কৃষকের সেই হলুদ বর্ণ পাকা ধান পানির তলে নুইয়ে পরায় দিন মজুর শ্রমিকরাও এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।

কৃষকের অভিযোগ এমনিতেই বাজারে ইরি-বোরো ধানের মুল্য নেই, তার মধ্যে শ্রমিকরা সুযোগ বুঝে পানিতে নুইয়ে পরা ধান বিঘা প্রতি চাহিদা ৫ হাজার ৫শত টাকা, শুকনো জমির ধান বিঘা প্রতি ৪ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত। এলাকার শ্রমিকরা সিন্ডিকেট করে এবার ধান কাটা মাড়াই করছে বলে কৃষক জানায়।

এছাড়া অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের লোকজন জীবিকার তাগিদে পোশাক কারখানা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি, শহর এলাকায় রিকশা-ভ্যান, টেম্পু, অটোরিকশা চালনোর কাজে যুক্ত হয়েছেন। এ পেশায় উপার্জন বেশি হওয়ায় কৃষি শ্রমিকের জীবনে বেশিরভাগ মানুষই আর ফিরে যেতে চান না। অনেকেই মুরগী খামার, মাছ চাষ, মুদি দোকান করছেন। যার ফলে দিন-দিন কমেছে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা।একদিকে শ্রমিক সংকট ও মজুরি বেশি অন্যদিকে ধানের বাজার মূল্য কম হওয়ায় দিশেহারা এই উপজেলার কৃষি পেশার মানুষরা।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে