রামেক হাসপাতালে সর্দি-জ্বরের ৪ ওষুধ ব্যবহার স্থগিত

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০১৯; সময়: ৫:২৯ pm |

নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ধলখোর এলাকা থেকে পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন মোঃ বদিউজ্জামান। ছেলের শরীর ফুলে গিয়েছিলো। গায়ে জ্বরও ছিল। দায়িত্বরত নার্স এসে একটি ইনজেকশন দিয়েছিলেন।

বদিউজ্জামান জানিয়েছেন, আমার বাচ্চার আগে যাদের ওই ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে হঠাৎ দেখি আশপাশে কয়েকজন খিঁচুনি দিয়ে কাঁপতে আরম্ভ করেছে। আমি নার্সদের কাছে গেলাম। ম্যাডাম আমাকে বলল কিছু হয়নি। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার বাচ্চারও একই অবস্থা।

একই হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলো দিনাজপুরের মির্জাপুর থেকে আসা কাজিম উদ্দিন মীর্জার চার বছর বয়সী ছেলেও। পেটের ব্যথার কারণে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিলো। ঠিক একই ধরনের সমস্যা দেখা দিলো তারও। খিঁচুনি দিয়ে কাঁপতে শুরু করলো আশপাশের বিছানারও বেশ কয়েকটি শিশু।

কাজিম উদ্দিন বলছেন, হঠাৎ বাবা মায়েদের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেলো। সে সময় হঠাৎ করে সব নার্সরা কিছুক্ষণের জন্য পালিয়ে গিয়েছিলো। যখন চিল্লাচিল্লি শুরু হল তখন বড় ডাক্তাররা আসলো। তারা এসে অন্য ইনজেকশন দিলো। মাথায় পানি-টানি দিলো।

ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সন্ধেবেলায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিভাগে। কলেজের প্রিন্সিপাল ও সেখানকার পিডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ নওশাদ আলী জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ১৪টি শিশুর একই ধরনের সমস্যা হয়েছে।

যাদের সমস্যা হয়েছে তাদের সবাইকে একই ধরনের চারটি ঔষধ দেওয়া হয়েছিলো। জ্বর, সর্দি-কাশির জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেফট্রিয়াক্সন ও ফ্লুক্লক্সাসিলিন। আলসার ও পাকস্থলীর সমস্যা উপশমের জন্য র‌্যানিসন। আর ব্যথার জন্য ব্যবহৃত বুটাপেন। এই চারটি ঔষধ যাদের দেওয়া হয়েছে সেই সব শিশুদের সবার একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ডাঃ নওশাদ আলী বলছেন, সাবধানতা হিসেবে তাৎক্ষণিক শিশুদের জন্য ঔষধগুলোর ব্যবহার বন্ধ দেওয়া হয়। তবে বড়দের ঔষধগুলো দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ওষধের সবগুলোই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ঔষধ কোম্পানি এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক তৈরি। এই ঔষধগুলো আমরা নিয়মিত ব্যবহার করি। কখনো কোন সমস্যা হয়নি। সেগুলোর এক্সপায়ার ডেটগুলোও ঠিক ছিল। হঠাৎ করে কি হল এটা আমাদের কাছে খুবই আশ্চর্যের বিষয়। হতে পারে প্রচণ্ড গরমে এর কোন কেমিকেল রিঅ্যাকশন হয়েছে।

ওদিকে এসেন্সিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড এই ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে একটি বোর্ড গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির বোর্ড অফ ডিরেক্টরসদের একজন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ।

তিনি জানিয়েছেন, এই বোর্ড বোঝার চেষ্টা করছে কোন ঔষধগুলো কোনটির সাথে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনটির সাথে মিক্স হয়ে কোন রিঅ্যাকশন হয়েছে কিনা।

তিনি আরও জানিয়েছেন, ওই ঔষধগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কোন ল্যাবে পাঠানো হবে সেনিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। ল্যাবের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত ঔষধগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে