ভেজাল খাদ্যপণ্য নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন, সরকার কী করে?
পদ্মাটাইমস ডেস্ক : ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজারে থাকায় উষ্মা প্রকাশ করে এ বিষয়ে প্রশ্ন রেখে হাইকোর্ট বলেছেন: এসব বিষয়ে সরকার কী করে? বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও জব্দ চেয়ে করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট এ প্রশ্ন রাখেন।
এ সময় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন: ‘একের পর এক ভেজালের বিষয় হাইকোর্টে আসছে। আমরা মানুষের অন্য মামলা করব না এগুলা দেখব? এগুলা তো সরকারের কাজ। কোর্টের কাজ নয়। সরকার কী করছে? আবার আমরা এসব বিষয়ে আদেশ দিলে তো আমাদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু বিষয়গুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলো আমাদের কোর্টে আসলে আমরা তো ফেলে দিতে পারি না।’
আদালত বলেন: ‘এই যে দেখছি হলুদের গুড়ায় ভেজাল, ব্র্যান্ডের তেলে ভেজাল, সেমাইতে ভেজাল। আইনে তো এ বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। আমরা এখন কী করব বুঝতে পারছি না। আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
আদালত আরো বলেন: ‘রোজা আসলেই কেন ভেজালের বিষয়টি খোঁজা হয়? রোজার সাথে ভেজালের কী সম্পর্ক? কারণ খাবার তো সারা বছরই আমাদের খেতে হয়।’
এরপর আদালত বিএসটিআই’র পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজার থাকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই’র ডেপুটি ডিরেক্টর পর্যায়ের দুইজন কর্মকর্তাকে হাইকোর্টে তলব করেন। আগামী রোববার তাদের আদালতে এসে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ওইদিন এ বিষয়ে আদেশের জন্য হাইকোর্ট দিন ধার্য করেন।
আজ আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
এর আগে বিএসটিআই’র পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও জব্দ চেয়ে হাইকোর্টে আজ একটি রিট করে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি। এ রিটে ওই ৫২টি পণ্যের গুনগত মান ঠিক না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয় এবং জড়িতদের জন্য শাস্তির ব্যাবস্থা চাওয়া হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব,শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটির পক্ষ থেকে উপরোক্ত বিবাদীদের একটি লিগ্যাল নোটিস দেওয়া হয়। ওই নোটিসে বলা হয়: ‘বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল বলে উল্লেখ করে বিএসটিআই বলে, এসব খাদ্য পণ্য মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভার আক্রান্তের পাশাপাশি মানুষ হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারে।’
যে ৫২ টি পণ্যকে নিম্নমানের ও ভেজাল বলে বিএসটিআই উল্লেখ করে সেগুলো হলো: গ্রীণ ব্লিচিং এর সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের সরিষার তেল, সিটি ওয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুড়া, প্রাণের হলুদ গুড়া, ফ্রেশের হলুদ গুড়া, এসিআইর ধনিয়ার গুড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারী পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুড়া, মিস্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইর লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিন যুক্ত লবন, মোল্লা সল্টের আয়োডিন যুক্ত লবন, কিং’য়ের ময়দা, রুপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডস এর সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিলের হলুদ গুড়া, মধুমতির আয়োডিন যুক্ত লবন, সান ফুডের হলুদ গুড়া, গ্রীন লেনের মধু, কিরনের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুড়া, ডলফিনের হলুদের গুড়া, সূর্যের মরিচের গুড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিন যুক্ত লবন, মদীনার আয়োডিন য্ক্তু লবণ, নুরের আয়োডিন যুক্ত লবণ।
এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার বা জব্দের জন্য দেওয়া ২৪ ঘন্টা সময় শেষ হলেও লিগ্যাল নোটিশের জবাব না পেয়ে আজ হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিটটি করে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি।