রমজানে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়

প্রকাশিত: মে ৭, ২০১৯; সময়: ৮:৪৪ pm |

হোছাইন আহমাদ আযমী : হযরত সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একবার নবী করীম (স.) শাবানের শেষ তারিখে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের উপর এমন একটি মাস আগমন করছে যা আত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বরকতময় মাস, উক্ত মাসে একটি রাত রয়েছে (শবে কদর) যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা উক্ত মাসের রোযা ফরয করেছেন এবং রাত্রে কিয়াম করাকে (তারাবী) সওয়াবের বিষয় বানিয়েছেন।

যে কেউ এই মাসে একটি নফল ইবাদত করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরয ইবাদত করল। যে একটি ফরয পালন করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করল। এটি হচ্ছে সবরের মাস আর সবরের বিনিময় রয়েছে জান্নাত। এই মাস হলো সহমর্মিতার মাস, এই মাসে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হয়।

যে কেউ অন্য কাউকে ইফতার করাবে এটা তার জন্য গুনাহ মাফ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে। রোযাদার ব্যক্তির সওয়াবের মত সেও সওয়াব প্রাপ্ত হবে অথচ রোযাদারের সওয়াব বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মধ্যেতো অনেকেরই এই সামর্থ নেই যে, অন্যকে ইফতার করাবে অর্থাৎ পেট ভরে খাওয়াবে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন এটা পেট ভরে খাওয়ানোর উপর নির্ভরশীল নয় বরং এই সওয়াব তো সেই ব্যক্তিও প্রাপ্ত হবে, যে একটি খেজুর কিংবা এক ঢোক পানি অথবা এক ঢোক দুধও পান করাবে।

এটি এমন একটি মাস যার প্রথম ভাগ হচ্ছে রহমত, মধ্যভাগ মাগফিরাত, এবং শেষ ভাগে রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এই মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করবে। তার মধ্যে দুটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা হচ্ছে কালিমায়ে তাইয়্যেবা ও ইস্তেগফার বেশি বেশি পড়া। আর দুটি এমন জিনিস যা ছাড়া তোমাদের কোন গতি নেই তা হচ্ছে জান্নাতের কামনা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা।

যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাকে আমার হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন, ফলে জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত তার পিপাসা অনুভুত হবেনা। (তারগীব তারহীব-২০৩ সহীহ ইবনে খুযাইমা সূত্রে; বায়হাকী,)

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোযা-২
[রোযার পার্থিব উপকারিতা:] ইসলাম রোযাকে মুমিনের জন্য রোগমুক্তি বলে ঘোষনা দিয়েছে। আমাদের পাশ্র্বর্তী একটি দেশের নাগরিক ডাঃ মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ বলেন, আমি একবার গবেষনার কাজে ফ্রান্স গিয়েছিলাম। রমযান মাস আসায় আমি আমার প্রফেসরকে বললাম, আমি তারাবীহ পড়ব, আমার ছুটির প্রয়োজন। তিনি বললে তাতে আবার ছুটির প্রয়োজন কেন? আমি বললাম, আমাকে অনেক দূরে গিয়ে তারাবীহ পড়তে হবে। যাতায়াতে অনেক কষ্ট হবে, তাই আমার ছুটি প্রয়োজন।

প্রফেসর বললেন, আমি এখানে তোমাকে কিছু লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, যাদের মুখে দাড়ি, মাথায় পাগড়ী, পরনে জুব্বা, মিসওয়াক শেষে ওজু করে আযান দিয়ে নামাজ আদায় করছে। একজন সকলের সামনে দাড়িয়ে তেলাওয়াত করছে, বাকিরা শ্রবণ করছে। আরো মজার ব্যাপার হল তারা পুরা মাস রোযাও পালন করছে। তাছাড়া ইতিকাফেও বসেছে। সকাল সন্ধ্যা সাহরি ও ইফতারি নিয়মানুযায়ি আদায় করছে।

আমি খুব খুশি হয়ে মাস শেষে প্রফেসরকে বললাম আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনি আমাকে অনেক বুযুর্গ লোকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যাদের সাথে আমার পুরো মাস আনন্দে কেটেছে।

প্রফেসর সাহেব মুচকি হেসে বললেন, আপনি জানেন এরা কারা? এরা সবাই ইহুদী। আমি বললাম, বলেন কী? তা তো আমি জানতেও পারিনি। তিনি বললেন, তারা সকলে একটি প্রজেক্টের আওতায় কাজ করছে। প্রজেক্ট হলো, মুসলমানরা যে এক মাস রোযা রাখে তাতে কোন কল্যাণকর কিছু আছে নাকি তা জানার জন্যই। যদি থাকে তাহলে আমরা সকলে সম্মিলিত ভাবে মুসলমান হয়ে যাব। (সূত্র: উলামায়ে কিরাম কা যিম্মাদারিয়া)

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে