বাগমারার সেই ধর্ষক গ্রেপ্তার, মামলা তুলতে স্কুলছাত্রীর পরিবারে চাপ

প্রকাশিত: মে ৭, ২০১৯; সময়: ৪:৫৪ pm |

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারা : অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছে বাগমারার সেই স্কুলছাত্রীর ধর্ষণ চেষ্টাকারী বখাটে যুবক লম্পট তৌহিদ আলী(২৫)। সে যোগিপাড়া ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক এহিয়া আলীর ছেলে। এহিয়া আলী কুদাপাড়া মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক।

বাগমারা থানা পুলিশের একটি দল রোববার রাতে বারইহাটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তৌহিদকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে ওই স্কুলছাত্রীর দাদা বাদী হয়ে তৌহিদকে আসামী করে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় বাগমারা থানায় একটি মামলা দায়ের করে।

ছাত্রীটির আত্মীয় স্বজনরা জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে প্রভাবশালী তৌহিদ ও তার বাবা মাদ্রাসা শিক্ষক এহিয়া আলী এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির মাধ্যমে মামলটি প্রত্যাহারের জন্য স্কুলছাত্রীর পরিবারের ওপর নানামূখী চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।

পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার সকালে উপজলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামের মাঠে ঘাষ কাটতে গেলে লম্পট তৌহিদ শিশুটিকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পাশ্ববর্তী ভুট্রা ক্ষেতে নিয়ে যায়। ধর্ষণ চেষ্টার এক পর্যায়ে লম্পট তৌহিদ শিশুটির শরীরের দুইটি স্থানে কামড় দেয়। এ সময় শিশুটির আত্মচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। স্থানীয়রা ধর্ষণ চেষ্টাকারী যুবক তৌহিদকে হাতেনাতে ধরে আটকে রাখে। পরে বিকেলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গিয়ে একটি সাজানো শালিস বৈঠকের মাধ্যমে কান ধরে ওঠবস করিয়ে লম্পট তৌহিদকে তার পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ওই শালিস বৈঠকের নামে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়। পরের দিন বিষয়টি পদ্মাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের। বিয়টি জেলা পুলিশ সুপার মো: শহিদুল্লাহ (বিপিএম,পিপিএম) এর নজরে আসলে তিনি বাগমারা থানার পুলিশকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষণ চেষ্টাকারী লম্পট তৌহিদকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।

স্কুল ছাত্রীটির মামা ও তার এক প্রতিবেশি জানান, মামলা দায়েরের পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে স্কুলছাত্রীটির পরিবার। ছাত্রীটি স্থানীয় একটি স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লিখাপড়া করত। এই ঘটনার পর থেকে সে একেবারে বিমর্ষ হয়ে পড়েছে। বাইরেও খুব একটা বের হচ্ছে না এমনকি কারো সাথে খুব একটা কথাবার্তা ও ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করছে না। এছাড়া ঘটনার পর থেকে সে স্কুল যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকটা একঘরে হয়ে পড়েছে ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবার।

এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে লম্পট তৌহিদের পিতা মাদ্রাসা শিক্ষক ও জামায়াত নেতা মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য স্থানীয় কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে স্কুল ছাত্রীটির পরিবাররের উপর চাপ সৃষ্টি ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, লম্পট তৌহিদের পিতা এহিয়া মাষ্টার স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী ও প্রচুর বিষয় সম্পত্তির মালিক। তিনি স্থানীয় ভাবে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতাশীন হওয়ার পর থেকে ভোল পাল্টিয়ে স্থানীয় নেতাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে রাতারাতি আওয়ামী লীগার সেজেছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী মহলের সাথে তার আঁতাত রয়েছে। যে কারণে ওই মহলকে হাত করে মামলাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় লম্পট তৌহিদের পিতা এহিয়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের হাত করে স্কুল ছাত্রীর পরিবারকে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দিয়ে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি এমনকি তাদেরকে গ্রামছাড়া করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, পুুলিশ তৎপর ভুমিকা নেওয়ার কারণে লম্পট তৌহিদকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। এই ঘটনার বিভিন্ন দিক তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। স্কুলছাত্রীর পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি পুলিশকে আবগত করলে আইনী সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
পদ্মাটাইমস ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
topউপরে