ফণীর প্রভাবে পানির নিচে ৪শ হেক্টর জমি
নিজস্ব প্রতিবেদক, নিয়ামতপুর : নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ ঘুর্নিঝড় ফণীর প্রভাবে অসময়ে বৃষ্টি, ঝড় ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাই শ্রমিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। যদিও বা কোন কোন কৃষক শ্রমিক পেয়েছে তাও অধিক মজুরি দিয়ে। সম্প্রতি বৈরী আবহাওয়া শুক্রবার ও শনিবারের ভারী বর্ষণে উপজেলার প্রায় বোরো ধান ক্ষেত পানির নিচে। সকল পাকা ধান মাটিতে শুয়ে গেছে। ছাতড়া বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে নিয়ামতপুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২শ হেক্টর জমির বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এতে করে ক্ষতির স্বীকার হয়েছে চন্দননগর, ভাবিচা, শ্রীমন্তপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের প্রায় সহস্রাধিক বোরো চাষী। ঠিক কেটে নেওয়ার আগ মুহুর্তে ধান হঠাৎ করেই পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। কেউ কেউ আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে চাইলেও মিলছে না শ্রমিক। যদিও বা কারো কারো শ্রমিক মিলছে তাও মজুরির পরিমান অধিক। কোন কোন কৃষক অর্ধেক দামে (অর্থাৎ প্রতি বিঘা ২০ মন হলে শ্রমিক পাবে ১০ মন) ধান কেটে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দিন চুক্তিতে (প্রতি দিন ৪শ টাকা করে) কেটে নিচ্ছেন। নিয়ামতপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাপড়া বিলে লাগানো বোরো চাষীরা। তাদের সকল ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চাপড়া বিলটি চাড়পা গ্রামের পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাবিচা গ্রামের পূর্ব দিকদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চাপড়া হতে ভাবিচা শ্রীমন্তপুর বাহাদুরপুর ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চলের বোরো ধানগুলো সব তলিয়ে গেছে। এমন দুর্যোগ মুহুর্তে কপাল পুড়ছে চাষীদের। আর এ জন্য উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের মালঞ্চি গ্রামের পূর্ব পার্শ্বে শিব নদীর উপর প্রস্তাবিত রবার ড্যামআজও নির্মিত না হওয়ায় বার বার এমনটা ঘটছে বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের।
দুর্গত এলাকার কৃষকরা জানান, শিব নদীর উপর রাবার ড্যাম নির্মানের পরিকল্পনা থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বিল এলাকার কৃষকরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে বোরোর সেচ সংকট মোকাবেলায় খালেও উপর বাঁধ নির্মান করেন। কিন্তু এ বাঁধেই তাদের কপাল পুড়েছে। হঠাৎ করেই বেরী আবহাওয়ায় দুদিনের ভারী বর্ষণ তাদের কষ্টের ফসল ডুবিয়ে দেয়। তাদের অভিযোগ রবার ড্যাম থাকলে খরা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের মাধ্যমে ও বর্ষায় বা হঠাৎ ভারী বর্ষনে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে তারা এমন ক্ষতির শিকার হতেন না। তাদের দাবী হাজার হাজার কৃষককে বাঁচাতে শিব নদীর উপর প্রস্তাবিত রবার ড্যাম নির্মান হোক আর এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
সরেজমিনে ভাবিচা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল, চাপড়া বিল ও ছাতড়া বিলের সিদাইন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বোরো মাঠের বিস্তীর্ণ ক্ষেত পানি নিচে তলিয়ে আছে। তবে ছাতড়া বিলের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধান কেটে ঘরে তোলা হয়েছে।
ভাবিচা ইউনিয়নের চৌরী গ্রামের কৃষক ভবেন চন্দ্র বর্মন বলেন, আমি আড়াই বিঘা বোরো চাষ করেছিলাম।সম্পূর্ণ পানিতে ডুবে গেছে। এখন আধাআধি দরে কাটতে হচ্ছে। গাবতলী গ্রামের কৃষক রুবেল বলেন, আমি ৫ বিঘা বোরো চাষ করেছিলাম। আমারও একই অবস্থা।
চাপড়া গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন বলেন, আমি ১৩ বিঘা বোরো চাষ করিছিলাম। গত বৃহস্পতিবার ধানগুলো কেটেছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টির পানিতে সব ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওবাইদুল হক বলেন, আমি নিজে উপজেলা কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে আমার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পরিদর্শন করি এবং ক্ষতির পরিমান নিরুপন করি। আমরা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে রির্পোট দিয়েছি তারা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন বরাদ্দ নেই।
চাপড়া গ্রামের কৃষক মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমি ৫ বিঘা বোরো আবাদ করেছি। বিলের কিছু জমি আধা আধিতে কাটতে হচ্ছে, কিছু জমি দৈনিক ৪শ টাকা দরে মজুরি দিয়ে কাটতে হচ্ছে আর কিছু জমি এক মনে আট কেজি ধান দরে কাটতে হচ্চে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বিঘাতে যদি ২০মন ধান হয় তাহলে শ্রমিককে ১০ মন দিতে হবে। আর দৈনিক চুক্তির ক্ষেত্রে ৪শ টাকা হারে প্রতি বিঘা ধান কাটতে ১৫ থেকে ১৬জন লাগে সে হিসেবে প্রতি বিঘা ধান কাটতে ৬ হাজার ৪শ টাকা মজুরি দিতে হচ্চে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমীর আব্দুল্লাহ ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৮শ ৮৫ হেঃ এর মধ্যে পানিতে দন্ডয়মান রয়েছে ১৮ হাজার ১শ ৫ হেঃ। হেলে পড়েছে ৬শ হেঃ এর মধ্যে জিরাশাইল ৫শ ২০ হেঃ এবং ব্রি ধান-২৮ ৮০ হেঃ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮২ হাজার মেঃটন। আর কোন দুর্যোগ না হলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তবে কৃষকদের মজুরী অনেক বেশী পড়ছে। তাই ধানের দাম যেন কৃষক সঠিকভাবে পাই আমরা সেদিকে নজর দিবো। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্ব প্রাপ্ত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নাম ও জমির পরিমান সংগ্রহ করছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়া মারীয়া পেরেরা জানান, আমি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরীর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।