ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’তে বৃষ্টি, বোরো ধানের ক্ষতি

প্রকাশিত: মে ৪, ২০১৯; সময়: ১১:২০ pm |
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’তে বৃষ্টি, বোরো ধানের ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব ও তান্ডব নিয়ে কয়েকদিন থেকেই করণীয় ও সতর্কবার্তা চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সাপ্তাহিক ছুটিও বাতিল করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুব বেশীকিছু করার না থাকলেও ‘ফণী’ দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি ছিল বাংলাদেশের।

আবার দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়, জলচ্ছ্বাস ও বন্যা দেখা দিলেও প্রকৃতিগত কারণেই রাজশাহী জেলা অনেকটা নিরাপদে থাকে। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শুধুমাত্র জনবিপর্যয় ও ক্ষেত-খামারের কিছুটা ক্ষতি করেছে।

শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত রাজশাহী মহানগর ও আশেপাশের উপজেলায় একটানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে বৃষ্টির গতিবেগ তেমন একটা ছিল না। আর যতটুকু হয়েছে তা রাজশাহী অঞ্চলের এক ধরণের পরিচিত ঝড়। শুক্রবার বিকেল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও শনিবার রাত থেকে সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে ছিল দমকা হাওয়া। তবে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বৃষ্টিতে পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। জমিতে কেটে রাখা ধান ও পাকা ধানের ক্ষতি বেশি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

জানা গেছে, শুক্রবার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী পাশের দেশ ভারতে আঘাত হানে। সেখানে প্রায় ১৩ জনের মতো মানুষ মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। আর সারাদেশে বজ্রপাতসহ বজ্রপাতে ও বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। শুক্রবার ও শনিবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী ৬৫ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯৮৫ হেক্টর (প্রায় ৩৭ হাজার বিঘা) বেশী জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবারে ৭০ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে।

জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলায় বিভিন্ন জাতের বোরো চারা রোপন হচ্ছে। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রিধান-২৮, ২৯, ৪৯, ৫০, ৫২, ৬২, বিআর-১৫, ১৬ এবং কিছু জমিতে হাইব্রিড। তবে এবারে বোরো বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি না থাকায় বোরো চারা ভাল হয়েছে।

শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এরপর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। রাত থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত বৃষ্টি নামতে থাকে বিরতিহীনভাবে। বৃষ্টির কারণে রাজশাহীর ৮টি উপজেলার পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। অনেক কৃষক মাঠে পাকা ধান কেটে রেখেছে ও যে ধান পেকে রয়েছে সেগুলোর ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষক-চাষি। পবা উপজেলার তেঘর গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, ‘জমির ধানের তলিয়ে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেতের ধান বাতাসে পড়ে গেছে। আবার যাদের ধান কাটা আছে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধান পড়ে যাওয়ায় ফলন কমে যাবে। আবার গতবারের কিছু সবজির মাচা পড়ে গেছে। তবে বেশী ক্ষতি হয়নি’।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ।

এ ব্যাপারে জেলা সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, ‘ফণী’র আঘাতে ক্ষেত-খামারের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। আর প্রকৃতিক দুর্যোগের ওপর কারও হাত নেই। এরপরেও আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতন করেছেন। বিভিন্ন সবজির মাচা মজবুত করতে বলা হয়েছে’।

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
topউপরে