বাগমারায় কান ধরে ছাড়া পেল স্কুলছাত্রীর ধর্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাগমারায় জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ভূট্টা ক্ষেতে শিশু স্কুলছাত্রীকে (১২) ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামে এ ঘটনার সময় স্থানীয় লোকজন ধর্ষণের চেষ্টাকারি যুবক হাতেনাতে ধরে আটকে রাখে। তবে বিকেলে তাকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে গিয়ে নামমাত্র সালিশ বৈঠকে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।
ধর্ষণের চেষ্টাকারি যুবকের নাম তৌহিদ আলী (২৫)। সে একই গ্রামের এহিয়া আলীর ছেলে। এহিয়া কুদাপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষক। তৌহিদ বিবাহীত হলেও কিছুদিন আগে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার শিশুটি স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। সে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিবেশী এক ছোটভাইকে নিয়ে মাঠে ঘাষ কাটতে যায়। বেলা ১১টার দিকে তৌহিদ স্কুলছাত্রী শিশুটিকে জোরপূর্বক ভূট্টা ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় দুই শিশুর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তৌহিদকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে তাকে মারপিট করে আটকে রাখে গ্রামবাসী। বিকেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তৌহিদকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। সেখানে সালিশ বৈঠক বসিয়ে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার পর শিশু স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টাকারি তৌহিদকে ছেড়ে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য বলেন, ‘‘মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের পর ওই যুবকে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নামমাত্র সালিশ বৈঠক বসানোর পর তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ধর্ষণের চেষ্টাকারি তৌহিদ কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানান ওই ইউপি সদস্য।
শিশুটির প্রতিবেশী এক চাচা জানান, ‘‘এ ঘটনায় শিশুটি প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। ঘটনার পর থেকে চঞ্চল শিশুটি চুপ হয়ে গেছে। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলছে না বা ঘরের বাহিরে বের হচ্ছে না। ঘটনাটির শক্ত বিচার হওয়া উচিত ছিল।’’
যোগাযোগ করা হলে আপোস-মিমাংসার জন্য অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে যোগিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, ‘‘বিষয়টি জানার পর গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে ওই ছেলেকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। প্রথমে মেয়ের পিতাকে মামলা করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মেয়ের কথা ভেবে সে রাজি হননি। সে কারণে সালিশ বৈঠক বসিয়ে আপোস-মিমাংসা করে দেয়া হয়েছে।’’
ছেলেটি শুধুমাত্র ‘মেয়েটির গায়ে হাত দিয়েছে, ধর্ষণের চেষ্টা করেনি’ দাবি করে মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘‘সালিশ বৈঠকের আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির অনুমতি নেয়া হয়েছিল। তাদের অনুমতি ক্রমে ৪০ থেকে ৫০ জন লোকের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক করে মিমাংসা করা হয়। সালিশ শেষে তৌহিদ কান ধরে সকলের কাছে ক্ষমা চায় এবং আর কোনদিন এ ধরণের ঘটনা ঘটাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এ নিয়ে তার কাছে লিখিতও নেয়া হয়েছে। এছাড়াও তৌহিদকে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে আসার আগে স্থানীয় লোকজন তাকে মারধরও করে।’’
বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, ‘‘মাঠের মধ্যে এক মেয়ের গায়ে এক ছেলে হাত দিয়েছে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে শুনেছি। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।’’